তৃণমূলও কংগ্রেসের তিন মন্ত্রী দেওয়ার চালকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে।
সাংসদ দীপা দাশমুন্সি, অধীর চৌধুরী ও আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালুবাবু) কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন। তাঁরা যে তিন জেলার সাংসদ সেই তিন জেলার থেকেই রাজ্যে মন্ত্রী নিয়োগ করার কথা ভাবছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও দলের প্রথম সারির নেতা সোমবার জানিয়েছেন, এখনও এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কংগ্রেসের শক্ত ঘাটি বলে পরিচিত মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুরের তিনি সাংসদকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করে সনিয়া গাঁধীর দল যাতে কোনও সুবিধা না নিতে পারে তার জন্য দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন মমতা।
জোট ভেঙে যাওয়ার পরে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে কংগ্রেসের ৬ মন্ত্রী বেরিয়ে এসেছেন। সেই ৬ কংগ্রেসের মন্ত্রীদের জায়গায় মমতা নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করবেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। কিন্তু কাকে নেবেন তা দলের শীর্ষ নেতাদের কাছেও স্পষ্ট নয়।
তবে দীপা, অধীররা কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁদের জেলা থেকেই মন্ত্রী করার চিন্তাভাবনা চলছে তৃণমূলের অন্দরে। মালদহ ও মুর্শিদাবাদ থেকে তৃণমূলের মন্ত্রী আছেন মমতা-সরকারে। মালদহের থেকে আছেন সাবিত্রী মিত্র এবং মুর্শিদাবাদ থেকে আছেন সুব্রত সাহা। তবে দু’জনেই প্রতিমন্ত্রী। তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ কোনও দফতরের দায়িত্ব দেওয়া বা মালদহে আরও একজন নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করার কথা ভাবা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মালদহের ইংলিশবাজারের কংগ্রেস বিধায়ক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ঘোষণা করেছেন তিনি তৃণমূলে যোগ দেবেন। প্রয়োজনে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েই তিনি তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে কৃষ্ণেন্দু জানিয়েছেন। তৃণমূলে যোগ দিলে তাঁকে মন্ত্রী করা হতে পারে জল্পনা রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে ছ’মাসের মধ্যে উপনির্বাচনে জিতে আসতে হবে কৃষ্ণেন্দুকে। আবার উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যকেও মন্ত্রী করা হতে পারে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের অনুমান।
মমতা-বিরোধিতায় অধীর-দীপাকে মন্ত্রী করে কংগ্রেস তো ঘৃতাহূতি দিয়েছেই, উত্তাপ বজায় রাখতে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদেরও পরামর্শ দিয়েছেন হাইকম্যাণ্ড। তারই ফলে দীপা-অধীরদের মন্ত্রী করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তৃণমূল নেতাদের কড়া সমালোচনা করতে কসুর করেননি প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। অধীর-দীপাদের মন্ত্রী হওয়াকে রবিবার কটাক্ষ করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এ দিন মানসবাবু পাল্টা বলেন, “যাঁরা একদিন ছটকা মেরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে এসে, সিপিএম বিরোধী মানুষের মনে আগাত দিয়েছেন, তাঁদের সমালোচনা, কটুক্তি করার কোনও অধিকার নেই।”
এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বলেছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংগঠনকে মজবুত রাখতেই শেষ পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নেওয়া হল না। ওই নেতাদের ব্যাখ্যা, পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বে কোনও রকম রদবদল চাইছে না হাইকম্যান্ড। প্রদীপবাবুকে সভাপতি পদে বহাল রেখেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ভোটে লড়ার পক্ষপাতী হাইকম্যান্ড। এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ বলেন, “সভাপতি হিসাবে প্রদীপবাবুর কাজে সন্তুষ্ট হাইকম্যান্ড। পশ্চিমবঙ্গ থেকে চার জনের নাম মন্ত্রী হিসেবে আলোচিত হয়েছিল। তার মধ্যে প্রদীপবাবুও ছিলেন। কিন্তু দলীয় নেতৃত্ব মনে করেছেন, প্রদীপবাবুর নেতৃত্বেই এখন প্রদেশ কংগ্রেস পরিচালিত হোক।” হাইকম্যান্ডের এই সিদ্ধান্তের পিছনে অবশ্য অন্য কারণ দেখছেন প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের কেউ কেউ। তাঁদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রদেশ সভাপতির পদ নিয়ে দলে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব যাতে মাথাচাড়া না-দেয়, সেই জন্যই প্রদীপবাবুকে স্বপদে বহাল রাখছে হাইকম্যান্ড। প্রদীপবাবুও জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিতে কংগ্রেস ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি রয়েছে। পুজো-দীপাবলি-উৎসবের রেশ কাটলেই আন্দোলনের পথে নামবে কংগ্রেস। |