দুর্গাপুজো শেষ। শেষ নিরঞ্জনের পালা। এ বার নতুন জামাকাপড়ে সাজবেন গ্রামের মানুষ। দূরের আত্মীয়-স্বজন চলে আসবেন আনন্দের অংশীদার হতে। বিজয়ার পরে বিষাদ নয়, শুধুই আনন্দ আর আনন্দ। আর তার জন্যই যেন কোমর বেঁধে দশমীর পরেই কাউন্ট ডাউন শুরু করে দেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর-১ ব্লকের সদিয়াল গ্রাম। দুর্গাপুজোর পরে এ যেন আর এক ‘দুর্গাপুজো’। এ ভাবেই লক্ষ্মীর আরাধনায় মেতে ওঠেন সদিয়াল গ্রামের মানুষ।
পুজোর মাস দুয়েক আগে থেকেই মহিলা-পুরুষেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গ্রামের মাঠে বিশাল আকৃতির মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু করে দেন। গোটা গ্রামে সাজিয়ে তোলা হয় আলোর সাজে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষেরই জীবিকা মাছ ধরা। বছরভর নদী-সমুদ্রে পড়ে থাকা মৎস্যজীবীদের এই সময় একসঙ্গে মিলিয়ে দেন ধনদেবী। তবে পুজো শুরুর ইতিহাসটা একটু অন্যরকম। গ্রামে কোনও পুজো না হওয়ায় প্রতিবছর দুর্গাপুজোর সময় এলেই মন খারাপ হয়ে যেত সদিয়ালের মানুষের। অথচ দুর্গাপুজোর বিশাল খবর সামাল দেওয়াও সাধ্যের বাইরে। |
শেষ পর্যন্ত উপায় হল। সকলে ঠিক করলেন দুর্গাপুজো না-ই হল, তাঁরা ধনদেবী লক্ষ্মীকে বরণ করবেন প্রতিবছর। সেই ভাবনা থেকেই বছর ছ’য়েক আগে সদিয়ালে পড়ল ধনদেবীর পদচিহ্ন। আজও সেই পদচিহ্ন বয়ে চলেছেন গ্রামের মানুষ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজোর জাঁক বেড়েছে। আর সেই জৌলুস এতটাই যে দুর্গাপুজোর চারদিনের আবহকে ঢেকে দিয়েছে। সদিয়ালে লক্ষ্মীর আরাধনা চলে পাঁচদিন ধরে। দুর্গাপুজোয় নয়, নতুন জামাকাপড়ে সদিয়াল সেজে ওঠে লক্ষ্মীপুজোয়। আত্মীয়-স্বজনের সমাগমে ভরে ওঠে গৃহস্থের আঙিনা। সদিয়ালের এই পুজোয় শুধু গ্রামের মানুষই নন, আশপাশের গ্রাম কৃষ্ণচন্দ্রপুর, কাশীনগর, অন্ধমুনি-সহ ১০-১২টি গ্রামের মানুষ মেতে ওঠেন।
পুজো কমিটির সভাপতি নন্দলাল মণ্ডলের কথায়, “দুর্গাপুজোর সময় গ্রামের মানুষ দূরে কোথাও দেবীদর্শনে যেতে পারেন না। তাই এই পুজো দিয়েই আনন্দের সবটুকু সুবাস নিয়ে নেন গ্রামের মানুষ।” আর ডলি মণ্ডল, শিখা হালদাররা বলে ওঠেন, “বছরভর ধরে যেন এরই অপেক্ষায় থাকি আমরা।” |