|
|
|
|
জঙ্গি-চাঁই ফাসিকে দিল্লিতে জেরা করবে কলকাতা পুলিশও
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
পুণের জার্মান বেকারি, বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, দিল্লির জামা মসজিদ।
২০১০ সালে এই তিনটি জায়গায় সন্ত্রাসবাদী বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত ফাসি মেহমুদকে সৌদি আরবে পাকড়াও করার পরে দিল্লিতে আনা হয়েছে অষ্টমীর সকালে। বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লি পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর অন্যতম ‘মাথা’ ফাসিকে এ বার জেরা করতে চায় পশ্চিমবঙ্গের পুলিশও। যে জন্য কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা চলতি সপ্তাহেই দিল্লি যেতে পারেন বলে লালবাজারের খবর। একই উদ্দেশ্যে সিআইডি এবং রাজ্য গোয়েন্দা শাখার অফিসারেরাও দিল্লি যাওয়ার তোড়জোড় করছেন।
ফাসিকে নিয়ে এ রাজ্যের পুলিশের মাথাব্যথা কেন? এসটিএফ-সূত্রের ব্যাখ্যা: কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন এলাকার কাকে কাকে আইএম জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য পড়শি দেশে পাঠিয়েছে, রাজ্যের কোন আন্তর্জাতিক সীমান্ত তারা ব্যবহার করছে, এবং এ রাজ্যে তাদের ‘স্লিপার সেল’-এর সদস্য কারা গোয়েন্দারা ফাসির কাছে থেকে সেই সব তথ্য পেতে চান। উপরন্তু পুলিশের দাবি, আইএমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য আমির রেজা খানের সঙ্গে ফাসির যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা। আদতে কলকাতার মফিদুল ইসলাম লেনের বাসিন্দা তথা আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি-হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত আমিরের গতিবিধি সম্পর্কেও ফাসির কাছে তথ্য মিলতে পারে বলে গোয়েন্দাদের আশা। পাশাপাশি ফাসিকে জেরা করে তাঁরা জানতে চান, আইএম বা লস্কর-ই-তইবার মতো সংগঠনের জঙ্গিদের পশ্চিমবঙ্গের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করানোয় জাল নোটের কারবারিরা ঠিক কী ভূমিকা নিচ্ছে। |
|
বস্তুত বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস-জালে পশ্চিমবঙ্গ-যোগের ছবিটা নানা ঘটনায় যে ভাবে সামনে আসছে, রাজ্য পুলিশের কর্তারা তাতেও যারপরনাই উদ্বিগ্ন। ফাসির মুখ থেকে এ বিষয়ে একটা সার্বিক ধারণা তাঁরা পেতে চাইছেন। ইতিমধ্যে এসটিএফ জেনেছে, মুম্বইয়ে ২৬/১১-র জঙ্গি হানা চলাকালীন করাচির ‘কন্ট্রোল রুমে’ উপস্থিত লস্কর সদস্য জইবুদ্দিন আনসারি ওরফে আবু জুন্দাল ২০০৬-এ বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিল। পরে সে পাকিস্তানে পাড়ি দেয়। এসটিএফের দাবি: হাওড়া স্টেশন থেকে তাকে নিয়ে রবীন্দ্র সরণির এক হোটেলে ভুয়ো পরিচয়ে এক রাত রাখা ও পেট্রাপোল সীমান্ত পার করানোয় জাল নোটের কারবারিরাই সাহায্য করেছিল বলে জুন্দাল জেরায় জানিয়েছে। সৌদি আরব থেকে দিল্লিতে ফেরত আসা জুন্দালকে গ্রেফতার করা হয় গত ২১ জুন। এবং গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সৌদিতে এই জুন্দালের সঙ্গে ফাসির নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র এক কর্তার কথায়, “আমাদের খবর অনুযায়ী, ফাসি মেহমুদ আইএমের দ্বারভাঙা গোষ্ঠীর (দ্বারভাঙা মডিউল) সদস্য। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের টাকা-পয়সার ব্যাপারটা গত দু’বছর ধরে ও-ই দেখছিল। ভারত থেকে পড়শি দেশে যেতে আইএম এখন পশ্চিমবঙ্গের কোন সীমান্ত-করিডর বেশি ব্যবহার করছে, সে সম্পর্কে ফাসির কাছে নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে।”
ফাসির সঙ্গে খাস কলকাতা-সংশ্রব কতটা, এসটিএফ তা-ও খতিয়ে দেখবে। উল্লেখ্য, আইএমের ‘দ্বারভাঙা মডিউলের’ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কাতিল আহমেদ সিদ্দিকি দিল্লিতে ধরা পড়েছিল দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের হাতে গত নভেম্বরে। গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: ফাসি মেহমুদের সহযোগী কাতিল কলকাতার বৌবাজারে কিছু দিন কাটিয়েছিল। সেই সূত্রেই এসটিএফ তার উপরে নজর রাখে, দিল্লি পুলিশকে সতর্ক করে তারাই। এর প্রেক্ষিতে ফাসির সঙ্গেও কলকাতার সরাসরি যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। গত ৮ জুন পুণের এক জেলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কাতিলের মৃত্যু হয়েছে। আইবি-র তথ্য অনুযায়ী, আদতে বিহারের ছেলে ফাসি মেহমুদ পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। স্ত্রীর নাম নিখাত পরভিন। সন্ত্রাসবাদী হয়ে ওঠার পরে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আইএমের সদস্য নিয়োগ ও তাদের দিয়ে নাশকতা চালানোর দায়িত্বে ছিল ফাসি। পরে সৌদির আল জুবাইলে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সময় আইএমের কোষাধ্যক্ষ হয়। ভারতের পুলিশ তাকে খুঁজছিল দু’বছর ধরে। অবশেষে সৌদি আরবে ধরা হয়।
আদালত ফাসিকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লি পুলিশের হেফাজতে রাখতে বলেছে।
|
জন্ম-কর্ম |
• নাম ফাসি মেহমুদ • বয়স ৩২ বছর
• বাড়ি বিহারে দ্বারভাঙা জেলার বড় সাইলা গ্রাম
• পরিবার বিবাহিত। বাবা চিকিৎসক, মা স্কুলশিক্ষিকা
• পড়াশোনা কর্নাটকের আঞ্জুমান ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
• জঙ্গি পরিচয় আইএমের কোষাধ্যক্ষ ও নতুন সদস্য নিয়োগের দায়িত্বে
• জঙ্গি কার্যকলাপ দেশে অন্তত তিনটি নাশকতার ঘটনায় অভিযুক্ত
• ডেরা গত ক’বছর সৌদি আরবে • বর্তমান ঠিকানা দিল্লি পুলিশের হেফাজত |
|
|
|
|
|
|