অতলান্তিকের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় হারিকেন আছড়ে পড়তে চলেছে উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলে। সাম্প্রতিক কালের আইরিন তো বটেই, এমনকী ২০০৪-এ ফ্লোরিডায় আছড়ে পড়া চার্লি কিংবা ২০০৫ সালে বাহামা, দক্ষিণ ফ্লোরিডা এবং কিউবা তছনচ করা ক্যাটরিনার চেয়েও এ বারের এই হারিকেন ‘স্যান্ডি’ বহুগুণে ভয়ঙ্কর হবে আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। আর সেই আতঙ্কেই আগামী দু’দিনের জন্য কার্যত ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে নিউ ইয়র্ক থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন প্রশাসন পর্যন্ত। বাস, ট্রেন, মেট্রোর মতো যাবতীয় পরিবহণ পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে বলে রীতিমতো নোটিস জারি করে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, ফিলাডেলফিয়া প্রশাসন। বন্ধ থাকছে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ওয়াল স্ট্রিটও। হারিকেন আতঙ্কের তীব্রতা এতটাই যে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতর পর্যন্ত সোম এবং মঙ্গলবার বন্ধ রাখা হচ্ছে। এমনকী জেট এয়ারওয়েজ, এয়ার ইন্ডিয়া, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ-সহ এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন উড়ান সংস্থা নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনগামী সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিল করেছে। |
বাতিল হয়েছে উড়ান। তারই তালিকায় নজর যাত্রীদের। নিউ ইয়র্কের লা গার্ডিয়া বিমানবন্দরে। ছবি: রয়টার্স। |
স্যান্ডির আতঙ্কের জেরে বারাক ওবামা এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রোমনি এই দু’দিনের জন্য তাঁদের নির্বাচনী প্রচারের কাজ বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন। রবিবার পৌঁছনো সত্ত্বেও ফ্লোরিডার প্রচার সভা বাতিল করে আজ হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেছেন ওবামা। নিউ ইয়র্কের পাশাপাশি নিউ জার্সি, ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভ্যানিয়া, কলম্বিয়া এবং ম্যাসাচুসেটসেও আপৎকালীন অবস্থা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণে আজ তিনি বলেন, সরকার এই আসন্ন বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার জন্য সব রকম ভাবে প্রস্তুত।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, সোম বা মঙ্গলবার সকালে স্যান্ডি আছড়ে পড়বে নিউ ইয়র্কে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে নিউ ইয়র্কের দিকে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে হারিকেনটি। স্যান্ডির দাপটে গত সপ্তাহে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কা, স্যান্ডির প্রভাবে প্রায় ১১ ফুট পর্যন্ত উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে নিউ ইয়র্ক, বস্টন এবং নিউ জার্সির উপকূল সংলগ্ন এলাকায়। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন ওয়াশিংটন ডিসি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ৬ কোটি মানুষ। |
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, অতলান্তিক পেরিয়ে আমেরিকায় ঢোকার আগেই আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে স্যান্ডি। কারণ, দেখা যাচ্ছে স্যান্ডির গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ১৪০ কিলোমিটার হয়েছে। এর সঙ্গে প্রচুর তুষারপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনের আশঙ্কা, স্যান্ডির প্রভাবে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে উত্তর-পূর্ব আমেরিকার বিস্তীর্ণ এলাকা। টানা পাঁচ দিন পর্যন্ত অন্ধকারে ডুবে থাকতে পারে উত্তর আমেরিকার বড় বড় শহরগুলি।
নিউ ইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গের আবেদন, কেউ যেন এই দু’দিন রাস্তায় না বের হন। ম্যানহাটান এবং কুইনসের মতো নিচু এলাকা থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবাইকে বেরিয়ে আসতে তিনি অনুরোধ করেছেন। ইতিমধ্যেই কোনি দ্বীপ, ম্যানহাটন সমুদ্রতট এবং ম্যানহাটনের ব্রুকলিনের ইস্ট নদী সংলগ্ন এলাকার মতো নিচু এলাকাগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার কাজ শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় অবস্থিত ৭৬টি স্কুলে তাঁদের থকার জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। এই দু’দিনের জন্য স্কুলগুলিতে সরকারি ভাবে ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে।
আমেরিকা এই আতঙ্ক যে অমূলক নয় তার কিছু নিদর্শন মিলেছে এর মধ্যেই। লন্ডন থেকে ফ্লোরিডা আসার পথে স্যান্ডির কবলে পড়ে ডুবে গিয়েছে ‘এইচএমএস বাউন্টি’ নামের একটি জাহাজ। উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলের রক্ষীরা হেলিকপ্টারে জাহাজের ১৪ কর্মীকে উদ্ধার করেন। দু’জন এখনও নিখোঁজ।
|
এক ধরনের শক্তিশালী ট্রপিক্যাল সাইক্লোন। হাওয়ার প্রচণ্ড বেগের সঙ্গে ঘনঘন বজ্রবিদ্যুৎ ও বিপুল বৃষ্টি এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জলের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিশাল উঁচু ঢেউ তোলে। স্থলে পৌঁছলেই শক্তি হারিয়ে ফেলে। |
মূলত অতলান্তিক এবং মেক্সিকো উপসাগরীয় এলাকায়। এ ছাড়াও প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলেও দেখা মেলে। |
সৃষ্টি জামাইকায়। মঙ্গলবারের মধ্যে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা নিউ ইয়র্ক, বস্টন এবং নিউ জার্সিতে। উঠতে পারে ১১ ফুট উঁচু ঢেউও।
|
প্রথম শ্রেণির এক ট্রপিক্যাল সাইক্লোন। বর্তমানে এর হাওয়ার বেগ ঘণ্টায় ১২০-১৪০ কিলোমিটার। অতলান্তিকে হারিকেনের ইতিহাসে স্যান্ডির মতো হারিকেন নজিরবিহীন। |
প্রবল জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমেরিকার পূর্ব উপকূলের কোনি দ্বীপ, ম্যানহাটন সংলগ্ন এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চলও। |
নিউ ইয়র্ক থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে এই ‘দৈত্য’ ঝড়। |