দেড় মাস ধরে দিন-রাত এক করে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘পালকির গান’ লক্ষ্মী পুজোর মণ্ডপে ফুটিয়ে তুললেন কালনার হিজুলি গ্রামের এক ঝাঁক যুবক। বিভিন্ন মূর্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কবিতাটির দৃশ্যায়ন। উদ্যোক্তাদের দাবি, হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় টানবে তাঁদের এই মণ্ডপ। রয়েছে নিউ তরুণ ক্লাবের লক্ষ্মীপুজোও। পুজো উপলক্ষে গ্রামে বসে মেলা, বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন আত্মীয়-পরিজনেরা। সব মিলিয়ে লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠে গোটা এলাকা।
গ্রামবাসীরা জানান, দু’দশক আগেও নদীর জল উপচে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হত গ্রামে। নষ্ট হত প্রচুর ফসল। গরীব গ্রামবাসীরা জড়িয়ে পড়তেন ঋণের জালে। এই অবস্থা থেকে নিস্তার পেতেই শুরু হয় লক্ষ্মী পুজো। |
কালনা ২ ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম হিজুলি। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে অঙ্কুর ক্লাবের মণ্ডপ। একটি জলাশয়ের পাশে ঘেরা জায়গায় বিভিন্ন ‘মডেল’ দিয়ে বৃত্তাকারে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। হোর্ডিংয়ে লেখা উদ্যোক্তাদের বক্তব্য। তাঁরা জানান, প্রযুক্তিনির্ভর দ্রুত গতির এই যুগে পুরনো দিনের সাহিত্য হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে সত্যেন্দ্রনাথের কবিতা ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় গানকে সম্বল করেই তাঁদের এই প্রয়াস, ‘পালকি চলে, দুলকি তালে।’ দৃশ্যায়ণের জন্য কবিতার পঙ্ক্তি ধরে পর পর সাজানো হয়েছে মডেলগুলি। বেশিরভাগই পাট, নারকেল ছোবরা, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি। মণ্ডপের মাঝামাঝি জায়গায় রাখা হয়েছে প্রতিমা। |
অন্যান্য মডেলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রতিমাও তৈরি করা হয়েছে হোগলা পাতা, কাঠের গুঁড়ি, পাট, খেজুর গাছের ছাল, অভ্র ও বালি দিয়ে। কবিতার আবহ ধরে রাখতে মণ্ডপের বাইরে সাউন্ড বক্সে বাজানো হচ্ছে পালকির বেয়ারাদের মৃদু সুরও। বাহারি আলোয় সাজানো হয়েছে আশপাশ। ক্লাবের সদস্য তারক মালিক, নির্মল মালিক, পল্লব হাজরা, অশোক মালিকদের কথায়, “অন্য বারের মতো বাইরের শিল্পীরা নন, এ বার মণ্ডপ সাজিয়েছি আমরাই। আশা করি, গ্রামের মাটিতে অন্য রকম স্বাদ পাবেন দর্শকেরা।”
গ্রামেরই নিউ তরুণ ক্লাবের উদ্যোগেও প্রতি বছর সাড়ম্বরে পালিত হয় লক্ষ্মী পুজো। এ বছর তাঁরা প্রতিমা তৈরি করেছেন সাবুর দানা দিয়ে। তিন দিন ধরে চলবে উৎসব। অভিনয় করে ফুটিয়ে তোলা হবে বাজারের দৃশ্য বা ট্রেন দুর্ঘটনার ছবি।
|