দুর্গা পুজো নয়, কাটোয়া মহকুমার দুই প্রান্তের দু’টি গ্রাম মেতে ওঠে লক্ষ্মীর আরাধনায়। কাটোয়ার বিষ্ণুপুর ও কেতুগ্রামের হাটমুর গ্রামের লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে তাই মেতে ওঠেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা।
কাটোয়া ২ ব্লকের বিষ্ণুপুর গ্রামের বেশির ভাগ যুবকই সোনা রুপোর গয়না তৈরির কাজ করেন। বছর কেটে যায় দিল্লি, মুম্বই, কলকাতাতে। দুর্গাপুজোয় কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরতে পারেন না গ্রামের অধিকাংশ যুবকই। পুজোর ১৫ দিন পর ছুটি পান এই কারিগরেরা। ঘরে ফিরতে ফিরতে পুজো কেটে যায়। তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে ১৫ বছর আগে আড়ম্বরে লক্ষ্মী পুজো শুরু হয় এসটিকেকে রোডের ধারের এই গ্রামে। গ্রামবাসীরা জানান, প্রথম দিকে গ্রামে পুজো হত মাত্র একটি। বছর দুয়েক ধরে আরও দু’টো পুজো হচ্ছে। দুর্গাপুজোর মতো চার দিন ধরে লক্ষ্মী পুজো হয় গ্রামে। পুজোর বিশেষ আকর্ষণ আতসবাজির প্রদর্শনী। এসটিকেকে রোডের ধারে মেলা বসে। ভিড় জমান আশপাশের অন্তত ১০-১২টি গ্রামের বাসিন্দা।
১৯৯৩ সালে পুজো শুরু করে গ্রামেরই গিনি স্টার ক্লাব। পুজোর বাজেট প্রায় দু’লক্ষ টাকা। গ্রামের বাসিন্দা সুদেব ঘোষ, মনোতোষ ঘোষেরা বলেন, “বাড়ি আসার পরে চার দিকে বিজয়ার সুর বাজত। ভাল লাগত না। তাই লক্ষ্মী পুজো শুরু করি আমরা। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্য চার দিন ধরে পুজো করা হয়।” |
বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকে বেশ কিছুটা দূরে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের হাটমুর গ্রাম। লক্ষ্মীপুজোর আলো ছড়িয়ে পড়ে এই গ্রামেও। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১২টি পুজো হয় এখানে। ৫৪ বছরের পুরনো এই গ্রামের পুজো। শুরু হয়েছিল স্থানীয় মুড়গ্রাম সাধারণ পাঠাগারে। তবে এখন প্রায় প্রতি পাড়াতেই পুজো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই গ্রামটিকে ডাকেন ‘লক্ষ্মী গ্রাম’ বলে। জনশ্রুতি আছে, প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে খরা হয়েছিল এই গ্রামে। সে বছর মাঠ থেকে ফসল ঘরে তুলতে পারেননি বাসিন্দারা। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সুকুমার ঘোষ, অজয় ঘোষেরা বলেন,“সে বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আমরা লক্ষ্মীকে ঘরে তুলতে পারিনি গ্রামে। তার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয়, সে জন্যই লক্ষ্মী পুজো শুরু করি আমরা।”
গ্রামের যুবকেরাও জানান, ফসল আগলাতে খেত জমি ভাগ করে মাঠ পাহারা দেন তাঁরা। জমি-মালিকেরা পারিশ্রমিক বাবদ এই কর্মীদের ফসল দেন। গ্রামের যুবক সুকান্ত ঘোষ বলেন, “ওই ফসল বিক্রি করে লক্ষ্মী পুজো করি আমরা।” এভাবেই লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে দিন ভর নানা অনুষ্ঠানে মেতে থাকে এই গ্রাম। |