বছরভর এক সুরেই কথা বলেন ছয় ‘ভাই’। শুধু দেবীপক্ষের শুরু থেকে দশটি দিন তাঁরা একে অন্যের ‘প্রতিপক্ষ’।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, দেবাশিস কুমার ও অতীন ঘোষ। ‘দিদি’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভাইদের দাপট পুজোর ময়দানেও। শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবুর নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ বছর দুই হল পুজো মানচিত্রে বিশেষ জায়গায়। উঠেছে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের চেতলা অগ্রণী বা পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের ভবানীপুর অগ্রদূত-ও।
আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বা মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার অবশ্য পুজোর ময়দানে পুরনো ক্লাবকর্তা। সরস্বতী পুজোয় শুরু করে অরূপবাবু আসেন দুর্গাপুজোয়। প্রায় এক দশক তাঁর নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘ দর্শক টানার লড়াইয়ে প্রথম। ফি বছর প্রথম সারির সব পুরস্কারও তারই ঝুলিতে। দেবাশিসবাবুর ত্রিধারা সম্মিলনীর ক্ষেত্রেও তাই। অতীন ঘোষ হাতিবাগান নবীনপল্লী, হাতিবাগান সর্বজনীন ও শিকদারবাগানের দায়িত্বে। তিনটিই কম-বেশি সফল।
এই পুজোগুলি ঘিরেই লড়াইয়ের তাল ঠোকেন ‘দাদা’রা। তাল মেলান ক্লাবের অন্য কর্তারাও। যদিও লড়াইয়ের তত্ত্বটাকে এক ধরনের ‘মজা’ বলতে চান নেতারা। ময়দানে যতই প্রতিপক্ষ হোন, খেলা শেষেই ‘পি কে-চুনী’র বন্ধুত্ব। অতীনবাবু বলেন, “লড়াইটা মূলত তৃণমূল স্তরের কর্মীদের। আমরা (পড়ুন, নেতারা) হাল্কা রসিকতার সুরে আলোচনা করি।” এক পুজোকর্তা জানান, লড়াইটা স্থানীয় ক্ষেত্রে। চেতলার সঙ্গে নিউ আলিপুর বা ভবানীপুরের। হাতিবাগানের তিনটি বড় পুজোর রশি অতীনবাবুর হাতে। লড়াইটা ‘দাদার অন্দরমহলেই’। তিনি বলেন, “পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় সম্পর্ক যাতে তিক্ত না হয়, তাও খেয়াল রাখতে হয়।”
লড়াইটা পুরস্কার বাগানোরও। যেমন অতীনবাবুর তিনটি ক্লাবের মোট পুরস্কার ৫২টি। ত্রিধারা সম্মিলনী পেয়েছে ‘পার্লে আনন্দবাজার পত্রিকা শারদঅর্ঘ্য’-সহ ৪০টি। চেতলা অগ্রণীও শারদঅর্ঘ্য-সহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। সবাইকে ছাপিয়ে নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘ ‘দাদাদের’ পুজোয় সেরা। সেরাকে কুর্নিশ করতে পিছপা নয় প্রতিযোগী ক্লাবগুলি। অতীনবাবু বলছেন, “অরূপ দীর্ঘদিন ধরে এক ভাবে পুজো করছে।” পরিবহণমন্ত্রীও বলেন, “ববি-অরূপ পুজো নিয়ে অনেক বেশি মাথা ঘামায়। পুজোয় আমার নামই থাকে শুধু। ক্লাবের ছেলেরাই সামলায়।” এ বারই ব্রাজিলের প্রাক্তন অধিনায়ক দুঙ্গাকে নিয়ে চেতলা অগ্রণীর পুজোতে যান তিনি। অষ্টমীতে সুরুচিতে ছিলেন হাতিবাগানের কর্তা।
আবাসনমন্ত্রীর মতে, রাজনৈতিক নেতা বা বিশিষ্টদের যত আগমন ঘটবে, ততই পুজো সমৃদ্ধ হবে। তার সাফল্য নিয়ে কী বলবেন এই তারকা-পুজোকর্তা? অরূপবাবুর কথায়, “পুজো করি ভিতর থেকে। নিজে হাতে সব কাজ করি। সেটাই সাফল্যের কারণ।” |