এক দিকে বজ্র আঁটুনি, অন্য দিকে ফসকা গেরো। এই পরিস্থিতিতে পড়ে পর্যাপ্ত এলপিজি গ্যাস পাচ্ছেন না শহর ও শহরতলির অটোচালকেরা।
এত দিন বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাস ব্যবহার করে চলছিল বহু অটো। নতুন কড়াকড়ি নিয়মে সেই চোরাপথ বন্ধ হয়েছে। এ দিকে, শহরে অটো চালানোর গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। তৈরি হয়নি চাহিদা মতো পাম্পও। তাই আইনি পথেও মিলছে না গ্যাস। গ্যাস ভরতে পাম্পের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে পড়ে রয়েছে সব অটো।
ভাড়া না বাড়ানোয় এর মধ্যেই বন্ধ হয়েছে চল্লিশ শতাংশ বেসরকারি বাস। তার উপরে অটো অমিল হয়ে পড়ায় ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। রাজ্য সরকার অবশ্য অটোর গ্যাসের এই সঙ্কটের কথা প্রকাশ্যে মানতে চায়নি। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, ‘‘একটা সমস্যার কথা শুনেছি। পুজোর ব্যস্ততায় সে ভাবে খোঁজ নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি খতিয়ে শীঘ্র ব্যবস্থা নেব।”
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি)-র অন্যতম কর্তা অভিজিৎ দে বলেন, “বেশ কিছু অটোচালক অবৈধ ভাবে জ্বালানি হিসাবে রান্নার গ্যাস ব্যবহার করতেন। তা বন্ধ হওয়ায় অটো-এলপিজির চাহিদা রাতারাতি বেড়ে গিয়েছে। তাই এই সঙ্কট।” |
কিছু দিন আগেও হাওড়ার একটি পাম্পে প্রতি দিন গড়ে বিক্রি হত দেড় হাজার লিটার এলপিজি। বৃহস্পতিবার সেখানে অটো চালানোর এলপিজি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭,০০০ লিটার। একই চিত্র কল্যাণীর একটি পাম্পেও। সেখানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৮ গুন বেড়েছে বলে আইওসি সূত্রে খবর।
পাশাপাশি, পুজোর শহরে ট্যাঙ্কার না ঢুকতে পারাও গ্যাসের অভাবের কারণ বলে দাবি করে পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর রাজ্য সভাপতি তুষার সেন বলেন, “পুজোয় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ ট্যাঙ্কার আটকে দিচ্ছে। তাই সঙ্কট আরও বেড়েছে।” বিপিসিএলের অমরনাথ দে বলেন, “ট্যাঙ্কারের সমস্যার জন্য হলদিয়া থেকে গ্যাস আনতে সমস্যা হচ্ছে।” তৃণমূল কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত অটোচালক সংগঠনের তরফে স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, “প্রয়োজনের তুলনায় গ্যাস ভরার কেন্দ্র কম বলে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া হলদিয়া থেকেও গ্যাস কম আসছে।”
এই পরিস্থিতিতে শহর ও শহরতলির প্রতিটি পাম্পেই অটো চালানোর গ্যাসের চাহিদা বাড়ন্ত। শুক্রবার কলকাতার বেশির ভাগ পাম্পেই এলপিজি মেলেনি। অটোচালকদের সিটু-সমর্থিত কলকাতা অটো অপারেটর্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাবুন ঘোষ বলেন, “অটোচালকদের অনেককে ২-৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস নিতে হচ্ছে।” মানিকতলার একটি পাম্পের ম্যানেজার নগেন্দ্রকুমার পাঠক বলেন, “২০ হাজার লিটারের ট্যাঙ্কার দাঁড় করানো আছে। বিকেলের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে ১২ হাজার লিটার।” সিআইটি রোডে বিপিসিএল-এর পাম্পের ম্যানেজার টি কে সান্যাল বলেন, “হলদিয়া থেকে অটোর গ্যাস আসছে না।” একই অবস্থা উল্টোডাঙা রোডে হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-এর (এইচপিসিএল) পাম্পেরও। সেখানকার ম্যানেজার ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, “তিন দিন ধরে আমাদের এখানে অটোর গ্যাস নেই।”
এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সিটু-র বাবুন ঘোষের মত, “নিরন্তর গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার উদ্যোগী না হলে সমস্যা বাড়বে।” তৃণমূলের শোভনদেববাবুর বক্তব্য, “বাড়াতে হবে গ্যাস ভরার কেন্দ্র।”
পরিবহণমন্ত্রীর অবশ্য বক্তব্য, “গত দেড় বছরে গ্যাস ভরার কেন্দ্র বেড়েছে। মাঝে মাঝে তেল সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করছি।” ভারত পেট্রোলিয়ামের টেরিটরি কো অর্ডিনেটর অমরনাথ দে বলেন, “বৃহত্তর কলকাতায় এখন প্রায় ৪০টি গ্যাস ভরার কেন্দ্র।” আইওসি-র এক পদস্থ অফিসার বলেন, “বেশ ক’টি পাম্পে ভাল বিক্রি নেই। তাই নতুন কেন্দ্র খোলার আগে যথেষ্ট ভাবা দরকার।” |