|
|
|
|
পুজোর গন্ধ এসেছে |
কলকাতাকে চ্যালেঞ্জ অসমের ভূমিপুত্রদের |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
কথায় আছে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। গুয়াহাটির ‘থিম পুজো’ও তার ব্যতিক্রম নয়। যবে থেকে থিম নিয়ে লড়াই শুরু হয়েছে সেই সময় থেকেই, স্থানীয় শিল্পীদের কদর গিয়েছে কমে। পকেটে টান পড়লেও দর্শক আর পুরস্কার টানতে বড় পুজো কমিটিগুলি কলকাতার শিল্পী, চন্দননগরের আলোর উপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা করছে। কিন্তু এ বছর টোকোবাড়ির পুজোয় ভূমিপুত্ররাই সর্বেসর্বা। সরকারি আর্ট কলেজের ছাত্রীছাত্রীরা মিলে মহাবলীপুরমের মন্দির এনে বসাচ্ছেন ব্রহ্মপুত্র নগরীতে।
পুজো ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। কিন্তু বৃষ্টি পিছন ছাড়ছে না। রেখচিত্রে পুজো কমিটির ব্যস্ততা ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিমা থেকে শুরু করে প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা, আরো কত রকমের কাজ বাকি পড়ে। একে অপরকে টক্কর দেওয়ার লড়াইটা দিন দিন বাড়ছে। তাই সবাই চায় সেরার সেরা। চায় সেরা শিল্পী, সেরা মাথার পুরস্কার। রাজ্যের শিল্পীরা মহানগরের বড় পুজো বা থিম পুজোয় অনেকটাই ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন। পুজোর এই চেনা ছক ভাঙতে চলেছে টোকোবাড়ি বারোয়ারি দুর্গাপুজো কমিটি। তাদের এবারের পুজোর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে সরকারি আর্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের উপর। দশে মিলে পরিকল্পনা করা হয়েছে তামিলনাড়ুর মহাবলীপুরম বা মামল্লাপুরমের মহিষমর্দিনী গুহামন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়া হবে। প্রায় ৩২ ফুট উঁচু প্যান্ডেলের জন্য খরচ ধরা হয়েছে মেরেকেটে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। |
|
গুয়াহাটির কহালিপাড়ায় প্রতিমাশিল্পীদের ব্যস্ততা। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
পাথরের খোদাইয়ের কাজ প্লাস্টার অব প্যারিসের মণ্ডে ফুটিয়ে তোলা হবে। ওই পাথর খোদাইয়ের জন্যই তো বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র মামল্লাপুরমের খ্যাতি। কোমর কষে মণ্ডপ বানাচ্ছেন পাপু ঘোষরা। আর্ট কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র পাপু জানালেন, মণ্ডপ তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন ৮ জন ছাত্র। অবশ্য তাঁদের পরিকল্পনামতো বাঁশ, কাঠ, কাপড়, প্লাস্টার সামলাতে কয়েকজন স্থানীয় কর্মীও হাত লাগিয়েছেন সেখানে। আপাতত, অবিকল প্লাস্টারে খোদাই ও প্রস্তরের আদল ফুটিয়ে তোলাই তাঁদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কয়েকটি মূর্তি বানানো হবে মণ্ডপ তৈরির পরে। পাপুর কথায়, “স্বাধীনভাবে এত বড়, ভাল কাজের দায়িত্ব পেয়ে বেশ ভাল লাগছে। সব কিছু যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। দর্শকের ভাল লাগাটাই তো শেষ কথা।”
আর্ট কলেজের ছাত্রদের এটিই প্রথম কাজ নয়। গত বছর, গুয়াহাটির শান্তিপুর এলাকার একটি পুজোকে ভরাডুবি থেকে বাঁচিয়েছেন তাঁরাই। কলকাতার কিছু শিল্পী মণ্ডপের দায়িত্ব নিলেও কাজ অর্ধেক শেষ করে তাঁরা চলে গিয়েছিলেন। নামমাত্র সময়ে আর্ট কলেজের ছাত্ররাই মণ্ডপ সম্পূর্ণ করেন। টোকোবাড়ি পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য রিংকু কলিতার কথায়, “আমাদের এখানেই বহু প্রতিভাবান শিল্পী রয়েছেন। সাহায্য, উৎসাহ পেলে তাঁরাই অসাধারণ সৃষ্টিশীল কাজ করে দেখাতে পারেন। সেই কথা ভেবেই আমরা সরকারি আর্ট কলেজের ছেলেমেয়েদের সামনে প্রস্তাবটি রাখি। ওরা খুব খুশি। খুশি আমরাও। এখানে ওঁদের কাজ সকলের মনে ধরলে ভবিষ্যতে আরও অনেক কাজের সুযোগ ওদের সামনেও আসবে।” |
|
|
|
|
|