|
|
|
|
‘র্যাট হোল’ খনন পদ্ধতি নিষিদ্ধ হল না |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
নির্বাচনের আগে শেষ অবধি খনি নীতি নিয়ে গা-বাঁচিয়ে খেলার পথেই হাঁটলেন মুকুল সাংমা। গুয়াহাটি হাইকোর্ট দুই দফায় রাজ্য সরকারকে জরিমানা করার পরে মেঘালয় বিধানসভায় খনি ও খনিজ নীতি২০১২ গৃহীত হল বটে, কিন্তু যে অবৈজ্ঞানিক ‘র্যাট হোল’ খনন নিয়ে বিতর্ক, সেই রীতিকে নিষিদ্ধ করার সাহস দেখাতে পারল না কংগ্রেস।
কয়লা ও চুনাপাথরে সমৃদ্ধ মেঘালয়ে কোনও নির্দিষ্ট খনি নীতি নেই। কয়লাসমৃদ্ধ মেঘালয়ের জয়ন্তী, গারো, খাসি পাহাড়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কয়লা উত্তোলন হয় না বললেই চলে। খনি এলাকায়, যে কোনও স্থানে গর্ত খুঁড়ে কয়লা তোলা হয়। পরিত্যক্ত খনির গর্তে নেমেও স্থানীয় বাসিন্দারা বেঁচে যাওয়া কয়লার সন্ধান করেন। এক গর্ত থেকে সুড়ঙ্গ করে অন্য গহ্বরে যাওয়া হয়। এই ধরনের খননকে ‘র্যাট হোল মাইনিং’ বলা হয়। অবৈজ্ঞানিক এই পদ্ধতিতে খননের ফলে মাটিতে খনিজের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে নদীর জলের রং। প্রতি বছরই অবৈধ খনিতে দম আটকে বা জল ঢুকে একাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গত বছর অগস্ট মাসে দক্ষিণ গারে পাহাড়ের সিজুতে গহ্বরে বিষাক্ত গ্যাসে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। চলতি বছরে নাঙালবিবরাতে একটি খনি থেকে কয়লা তোলার সময় ক্রেন ছিঁড়ে ভারী যন্ত্রপাতি খনিগর্ভে আছড়ে পড়লে ঘটনাস্থলেই এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। জখম হন ৮ জন। জুলাই মাসে একইভাবে নাঙারবিবরাতেই পরিত্যক্ত খনির দেওয়াল ধসিয়ে নদীর জল খনি গহ্বরে এত প্রবল বেগে প্রবেশ করে যে, ভিতরে থাকা শ্রমিকরা বের হওয়ার সময় পাননি। ১৬ জন শ্রমিক মারা যান। কিন্তু তারপরেও এই পদ্ধতিতে রাশ টানা যাচ্ছে না।
মার্চ মাসে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও খনি নীতি চালু না করায় মেঘালয় সরকারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। গৌহাটি হাইকোর্ট মে মাসেই রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্যে অবিলম্বে খনি নীতি চালু করতে হবে। তা না- হওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে রাজ্য সরকারকে ফের ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। আগামী ৩০ নভেম্বর বিষয়টি পুনরায় হাইকোর্টে ওঠার আগেই রাজ্য সরকার খনি নীতি পাশ করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু, ২৫টি অনুচ্ছেদের এই নীতিতে ইঁদুরের গর্ত বোজানোর কোনও কড়া নির্দেশ নেই। উপ মুখ্যমন্ত্রী তথা খনিমন্ত্রী বিন্দো এম লানোং জানিয়েই দেন, “এই মুহূর্তে, প্রচলিত খনন প্রক্রিয়া বন্ধ করলে খনি মালিক, শ্রমিক, গ্রাম সভাগুলির সঙ্গে সরাসরি সরকারের যুদ্ধ বেধে যাবে। বিকল্প পদ্ধতির জন্য এখনও রাজ্য তৈরি নয়। এমনি কেন্দ্রীয় সরকারও আমাদের জানিয়েছে, র্যাট-হোল খনন বন্ধ করার জন্য রাজ্য সরকারের উপরে কোনও চাপ দেওয়া হবে না। তার খনি নীতিতে, শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য কড়া নিয়ম আনা হয়েছে। পরিবেশ বাঁচাতে নানা ধরনের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।”
খনিমন্ত্রী আরও জানান, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি খনি সংক্রান্ত পরামর্শদাতা কমিটি গড়া হচ্ছে। এই কমিটি খনি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তদারক করবে। এই ধরনের খনিগুলিতে শিশু শ্রমিকের ব্যবহার বন্ধেও কড়া নজর রাখবে প্রশাসন।
তবে, নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিভাগের ডিন বি এস মিপুনের মতে, মেঘালয়ের ক্ষেত্রে ‘ওপেন কাস্ট’ পদ্ধতি অপেক্ষা ‘র্যাট হোল’ পদ্ধতি তুলনায় ভাল। ওপেন কাস্ট খননে পরিবেশ দূষণ বেশি হয়। মেঘালয়ে ভূপৃষ্ঠের অল্প নীচ থেকেই কয়লার স্তর শুরু। এই রাজ্যে ‘র্যাট হোল’ পদ্ধতিই একমাত্র বিকল্প। |
|
|
|
|
|