|
|
|
|
সীমা-বেড়ার ওপারের জমিতে চা-চাষে উৎসাহ |
উত্তম সাহা • শিলচর |
সীমান্তের কাঁটাতারের বাইরের জমিকে কাজে লাগাতে, চা-চাষে উৎসাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। শুরুর দিকে নিরাপত্তার কথা ভেবে বিএসএফ আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের আশ্বাসে তারা রাজি হয়। এর ফলে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে চা-চাষের জমি প্রায় পাঁচশো হেক্টর বেড়ে গিয়েছে। ক্রমশ জমি আরও বাড়বে। আগামী তিন বছরে সীমান্ত ঘেরা পুরো জমি তাদের আওতায় আসবে বলে দাবি করেন ত্রিপুরা ক্ষুদ্র চা-চাষি সংস্থার সভাপতি তথা সিপিএম বিধায়ক পবিত্র কর।
ত্রিপুরা রাজ্যের তিন দিকে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সীমা দৈর্ঘ্যে মোট ৮৫৬ কিলোমিটার। সেখানে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ চলছে। ৭৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে এর মধ্যেই বেড়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুরুতে এই বেড়া দেওয়া নিয়ে রাজ্য জুড়ে বিতর্ক দেখা দেয়। সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষ তাদের জমিজমা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। কারণ আন্তর্জাতিক বিধি এবং দু’ পক্ষের চুক্তি অনুযায়ী, মূল সীমান্ত থেকে দেড়শো গজ দূরে বেড়া বসানো হয়। এর ফলে বিপুল পরিমাণ জমি কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে পড়ছে। যেখানে যাওয়া, চাষ করা ইত্যাদির উপর নানান সরকারি বাধা-নিষেধ রয়েছে। কোথাও কোথাও চাষও হচ্ছে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই উৎসাহ হারাচ্ছে চাষি। এই পরিস্থিতিতে ওই জমিকে কাজে লাগাতে উদ্যোগী হয় সরকার।
পবিত্রবাবু জানান, ত্রিপুরা ক্ষুদ্র চা-চাষি সংস্থা এ ব্যাপারে প্রথম এগিয়ে আসে। সরকারের কাছে একটি বিশদ রিপোর্ট দিয়ে তারা জানায়, সামান্য পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ওই জমিতে চায়ের চাষ করা যায়। এতে বিভিন্ন দিক থেকেই লাভ। প্রথমত, কাঁটাতারের বাইরে হলেও এ যে ভারতেরই জমি, সেই বোধ সারাক্ষণ কাজ করবে। দ্বিতীয়ত, সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। তৃতীয়ত, রাজ্যে চায়ের উৎপাদন বেড়ে যাবে। এ ছাড়াও, চায়ের উচ্চতা ধানগাছের মতোই। ফলে বিএসএফের নজরদারি কোথাওই ব্যাহত হবে না। কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে চা প্রক্রিয়াকরণের কোনও কারখানা করা হবে না। তা হবে বেড়ার এ পারেই। বিশয়টি বিএমসএফ কর্তাদেরও বোঝানো হয়েছে।
পবিত্রবাবু ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমেরও চেয়ারম্যান। সেই সুবাদে তাঁর নিগম এই কাজে চা-চাষিদের সাহায্য করছে। পাশে রয়েছে টি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। এরাই আনকোরা চা-চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ওই সব জমি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হলেও সরকার নানা প্রকল্প থেকে তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে, চায়ের উপযোগী করে তোলার জন্য একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকেই প্রথমে জমিতে শ্রমিক লাগানো হয়। উত্তর ত্রিপুরা এবং ধলাইয়ে জুমিয়া পুনর্বাসন প্রকল্পকেও কাজে লাগানো হচ্ছে। পবিত্রবাবুর কথায়, গত বছর বিশালগড় থেকে এই কাজ শুরু হয়। পরে একে একে এগিয়ে আসেন কিল্লা, মোহনপুর, রাজনগর, কমলপুর প্রভৃতি অঞ্চলের সীমান্তবাসী মানুষ। এ পর্যন্ত ৫০০ হেক্টরে ৫০০ জন লাভবান হয়েছেন। আগামী দু’বছরে আরও দু’হাজার হেক্টর সীমান্তঘেষা জমিকে এই উদ্যোগের আওতায় আনা হবে। |
|
|
|
|
|