জামা-কাপড় বগলে নিয়ে মল্লিকঘাট ফুল বাজারের মধ্যে দিয়ে ছুটছেন এক যুবক। তার পিছনে ভিজে চুপচুপে গায়ে, স্রেফ অন্তর্বাস পরে ‘চোর, চোর’ চিৎকার করতে করতে ছুটছেন অন্য এক যুবক। শনিবারের বারবেলায় এই দৃশ্য দেখে পথচলতি মানুষ ভেবেছিলেন, সিনেমার শ্যুটিং চলছে। কিন্তু আদতে ঘটনাটি ছিল অন্য।
পুলিশ জানায়, হাওড়ার এক হোটেলকর্মী, সঞ্জয় সিংহ কুমার মল্লিকঘাটে ফুল কিনতে এসেছিলেন। কেনার পরে গঙ্গাস্নান সেরে নেওয়ার জন্য ছোটেলাল ঘাটে সাড়ে ছ’হাজার টাকা-সহ জামাকাপড় ছেড়েই জলে নামেন। উঠে দেখেন, এক যুবক তাঁর জামা-কাপড় নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ধাওয়া করেন তাকে। দৌড় লাগায় ওই যুবকটিও। তার পরে সেই দৃশ্য!
পুলিশ সূত্রের খবর, ‘ছোঁয়াছুঁয়ি’ খেলতে খেলতে সঞ্জয় ও ওই যুবক স্ট্র্যান্ড রোডে ওঠেন। তার পরে ফুটপাথ ধরে ছুটতে ছুটতে সোজা হাওড়া ব্রিজ। ব্রিজে ওঠার মুখে দু’জনকে ছুটতে দেখে সন্দেহ হয় এক পুলিশকর্মীর। আটকাতে গেলে তাঁকে ধাক্কা মেরে ছুট লাগায় যুবকটি। পিছু ছাড়েননি সঞ্জয়ও। ইতিমধ্যে ব্রিজের অপর প্রান্তে থাকা পুলিশদের কাছেও খবর গিয়েছে। ওয়াকিটকিতে সেই খবর পেয়েই উল্টো দিক থেকে দৌড় শুরু করেন উত্তর বন্দর থানার এক মহিলা কর্মী। দু’দিকের সাঁড়াশি ফাঁক গলতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে ওই যুবক।
পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম মহম্মদ জামিল। ট্যাংরার বাসিন্দা হলেও তার কাজকর্ম হাওড়া গোলাবাড়ি এলাকাতেই। তবে মাঝেমধ্যে ‘হাতের কাজ’ দেখাতে গঙ্গা পেরিয়ে কলকাতায় হাজির হত সে। তাকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, গঙ্গার ঘাটে আসা লোকজনই ছিল তার ‘শিকার’। আগেও বেশ কয়েকটি এমন ঘটনার অভিযোগ রয়েছে থানায়। পুলিশের দাবি, জেরায় জামিল স্বীকার করে, মাস তিনেক আগে বাবুঘাটে এক চিত্রসাংবাদিকের দামী ক্যামেরা নিয়ে পালায় সে। পুলিশের সন্দেহ, মল্লিকঘাট-বাবুঘাট এলাকায় ঘোরার সময়ে ‘শিকার’দের উপরে নজরদারি চালাত জামিল। সুবিধা মতো মালপত্র হাতিয়ে চম্পট দিত সে। তবে এই কাজে কোনও চক্র রয়েছে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। রবিবার জামিলকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়। |