দুই মেয়ে ও বৃদ্ধা মায়ের পরে এক প্রৌঢ়। দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি আবাসনের উপর থেকে পড়ে আবার অস্বাভাবিক মৃত্যু। রবিবার রাতে ওই বহুতল ভবনের ৩০তলার উপর থেকে পড়ে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম ধনঞ্জয় পাঠক (৫৯)। তিনি ওই আবাসনেরই দু’নম্বর টাওয়ারের ৩০-বি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ছিলেন।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, মানসিক অবসাদেই ৩০তলায় নিজের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওই প্রৌঢ়। ডিসি (এসএসডি) সুজয় চন্দ জানান, ধনঞ্জয়বাবুর কাছে একটি ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া গিয়েছে। তাতে লেখা, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হঠাৎই দু’নম্বর টাওয়ারের নীচে একটি গাড়ির উপরে কিছু পড়ার প্রচণ্ড আওয়াজ হয়। কয়েক জন আবাসিক এবং কর্মরত নিরাপত্তারক্ষীরা দৌড়ে গিয়ে দেখেন, নিজের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে একটি গাড়ির উপরে পড়ে গিয়েছেন ধনঞ্জয়বাবু। তুবড়ে গিয়েছে গাড়িটির ডিকি। ধনঞ্জয়বাবুর পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি এবং নীল ট্র্যাকস্যুট। তবে তিনি যে বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছেন, তাঁর পরিবারের কেউ সেটা টের পাননি। পরে অন্যান্য আবাসিক ও রক্ষীদের কাছ থেকে খবর পান তাঁরা। |
পুলিশ জানায়, শেয়ার বাজারে ব্রোকারির ব্যবসা ছিল ধনঞ্জয়বাবুদের। বছর চারেক আগে ওই আবাসনে আসেন। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী রজনী এবং ছেলে সিদ্ধার্থকে নিয়ে থাকতেন তিনি। সাউথ সিটির আবাসিক সংগঠন রেসিডেন্স ওনারস ফোরামের সম্পাদক সুবীর খাসনবিশ জানান, ‘আমি আমার প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারিনি’ কথাটি সুইসাইড নোটে লেখা ছিল। সুবীরবাবু বলেন, “ধনঞ্জয়বাবু খুবই আলাপী ছিলেন। সক্রিয় সদস্য ছিলেন এখানকার প্রবীণদের সংগঠনের। ঘটনার ঘণ্টা দেড়েক আগেও আমাদের সিনিয়র সিটিজেন ফোরামের সভায় এসেছিলেন। জড়িয়ে ছিলেন দুর্গাপুজোর কর্মকাণ্ডেও। কী করে এমন ঘটনা ঘটল, বুঝতে পারছি না।”
৩০ অগস্ট সাউথ সিটি আবাসনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন গল্ফ গ্রিনের বাসিন্দা অমিতা মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর দুই মেয়ে মুকুতা ও খেয়া। স্বামী নীহার মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে ভেঙে পড়ার কারণেই অমিতাদেবী দুই মেয়েকে নিয়ে আত্মহনন করেন বলে জানায় পুলিশ। ৩০ অগস্ট এবং রবিবার রাতের ঘটনার মধ্যে তফাত হল:
• ধনঞ্জয়বাবু ওই আবাসনের বাসিন্দা হলেও দুই মেয়ে ও মা ছিলেন বাইরের লোক।
• তিন মহিলা একটি টাওয়ারের ছাদ থেকে নীচে পড়েছিলেন আর ধনঞ্জয়বাবু গাড়ির উপরে এসে পড়েছেন নিজের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে। অমিতাদেবীরা রাতে যে-ভাবে বিনা বাধায় ওই আবাসনে ঢুকে ছাদে উঠে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, তাতে সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ দিনের ঘটনাও সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলে দিল। |