পুজোর শহরে এখনও বহু ফাঁক মেট্রোর নিরাপত্তায়
/১১-র পরদিনের ঘটনা। আমেরিকায় জঙ্গি-হানার পরিপ্রেক্ষিতে শহরে মেট্রো রেলে নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন করায় আঁতকে উঠেছিলেন কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর বক্তব্য ছিল, “ও কথা মুখে কেন, ভাবনাতেও আনতে নেই। শুধু ঈশ্বরের করুণা ও যাত্রীদের সদিচ্ছার উপরে মেট্রো রেলের সুরক্ষা দাঁড়িয়ে আছে।”
সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে মেট্রোর নিরাপত্তা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে কলকাতার মেট্রোয় নিরাপত্তার ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। যা সারা বছরের মধ্যে পুজোর দিনগুলোয় সব চেয়ে বেশি বলে ধরে নেওয়া হয়। কারণ, এই সময়েই ভিড়ের চাপ সব চেয়ে বেশি থাকে। তবে নিরাপত্তার ঝুঁকি যতই বেশি থাক, এ বার দুর্গাপুজোর সময়েও কলকাতা মেট্রোর ২৩টি স্টেশনের সব ক’টিতে এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানার বসছে না।
পুজোর আর বাকি দু’সপ্তাহ। মেট্রো রেল সূত্রের খবর, যাত্রীদের ব্যাগ বা অন্য জিনিসপত্র না-খুলেই তল্লাশির জন্য আনা ২৩টি আধুনিক যন্ত্র সম্প্রতি মেট্রো কর্তৃপক্ষের হাতে চলে এলেও এই অল্প সময়ের মধ্যে সব ক’টি স্টেশনে সেগুলি বসানো সম্ভব নয়। যার ফলে যাত্রীদের একটা বিরাট অংশের জিনিসপত্র তল্লাশিতে এ বারও বড় ফাঁক থেকে যাবে। বিশেষত, এ বার যেখানে উৎসবের দিনগুলোয় মেট্রোয় রোজ সাত লক্ষেরও বেশি যাত্রী হবে বলে আন্দাজ করছেন সংস্থার কর্তারা।
উৎসবের দিনগুলিতে
• চার দিন ট্রেন চলবে ৬১৮টি
• গত বার চলেছিল ৫৪২টি
• রেলরক্ষী বাহিনী ৩০০ জন
• বিশেষ রেলরক্ষী বাহিনী ৩০০ জন
• কলকাতা পুলিশ, গ্রিন পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ১০০০ জন
সুরক্ষায় ভরসা
• স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র
• এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানার (কিছু স্টেশনে)
• ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর
• হ্যান্ড-হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর
• পুলিশ কুকুর
মেট্রো রেলে জঙ্গি-হানার আশঙ্কা নতুন কিছু নয়। সাম্প্রতিক বলিউড ব্লকবাস্টার ‘কহানি’ ছবির পটভূমিই ছিল, মারণ গ্যাস দিয়ে কলকাতা মেট্রোয় এক ট্রেন-ভর্তি যাত্রীদের হত্যা। গত বছর এপ্রিলে মালদহের ইংরেজবাজার ও তার পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর হাওড়ার দক্ষিণ বাকসাড়ায় পার্সেলবোমা বিস্ফোরণের পরে কলকাতা মেট্রোয় নিরাপত্তার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের অভিমত। বিশেষত, যেখানে রাজ্যে পার্সেলবোমা বিস্ফোরণের দু’টি ঘটনার পিছনেই কোনও জঙ্গি সংগঠনের হাত নেই। আপাত দৃষ্টিতে ছাপোষা, এমন লোকজনই দু’টি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দু’জন মহিলাকে হত্যা করেছে। তার পরেও পুজোর সময়ে মেট্রোর সব ক’টি স্টেশনে এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানার না-বসাতে পারার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে গোয়েন্দাদের। একটা সময়ে পরিত্যক্ত বা সন্দেহজনক জিনিসপত্রে হাত না-দেওয়ার ব্যাপারে যাত্রীদের সচেতন করতে মেট্রোয় নিয়মিত ঘোষণা করা হলেও ইদানীং তা-ও আর বিশেষ শোনা যায় না। ওই প্রচারেও যেন ভাটা পড়েছে।
মেট্রো রেলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (জেনারেল) প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “পুজোর মধ্যে সব স্টেশনে এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানার বসানো যাবে না। তবে অক্টোবরের মধ্যে সব স্টেশনে ওই যন্ত্র বসে যাবে।”
গত বছর পুজোয় মেট্রোর নিরাপত্তায় প্রথম বার অন্য আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও এ কে-৪৭-এর মতো আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছিল। সে বার এ কে-৪৭ ছিল ৭৩টি। আগে মেট্রো রেলের নিরাপত্তায় থাকত ইনস্যাস, এসএলআর, কার্বাইন, নাইন এমএম পিস্তল এবং রিভলভারের মতো আগ্নেয়াস্ত্র। এ বার পুজোয় কলকাতা মেট্রোর নিরাপত্তায় গত বারের প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক এ কে-৪৭ থাকছে। কলকাতা মেট্রো রেলের সিনিয়র সিকিওরিটি কমিশনার মহেশ্বর সিংহ বলেন, “বেশ কিছু নতুন এ কে-৪৭ ইতিমধ্যেই আমাদের হাতে চলে এসেছে। শীঘ্র সেগুলি বিশেষ রেলরক্ষী বাহিনীর (রেলওয়ে প্রোটেকশন স্পেশ্যাল ফোর্স) জওয়ানদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া, অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র তো রয়েছেই।”
কিন্তু ইদানীং মেট্রোয় যাতায়াতের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান সমস্যা হল, যান্ত্রিক গোলযোগ বা নিছক গুজবের কারণে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পরপর ঘটনা। বহু ক্ষেত্রেই যাত্রীরা আতঙ্কিত হচ্ছেন সুড়ঙ্গে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে। নিছক আগুন লাগার গুজব ছড়িয়ে যাওয়ায় এক কামরা থেকে অন্য কামরায় ছোটাছুটিও করছেন। ভিড় ট্রেনে এ রকম ঘটলে বহু যাত্রী পদপিষ্ট হতে পারেন বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষও। অথচ, ট্রেনের যাত্রীদের উদ্দেশ্যে চালক কিংবা গার্ড-এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘোষণা করার থাকলে অনেক কামরাতেই তা শোনা যায় না যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে।
ফরমায়েশ মতো এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানার বা এ কে ৪৭-এর মতো আগ্নেয়াস্ত্র এলেও ন্যূনতম ত্রুটিগুলি রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.