জুতোর দোকানের সামনে দু’টো লাইন চলে গিয়েছে দু’দিকে। পোশাকের দোকানের ভিড় উপচে রাস্তায়। দূর থেকে শুধু কালো কালো মাথা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না।
পুজোর দু’সপ্তাহ আগে, রবিবার এটাই ছিল ধর্মতলা চত্বরের ছবি। ছুটির সকাল থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল নিউ মার্কেট, লিন্ডসে স্ট্রিট এলাকায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই তা জনসমুদ্রের চেহারায়। মফস্সল থেকেও প্রচুর মানুষ এ দিন কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। নিউ ব্যারাকপুর থেকে সপরিবার এসেছিলেন অসীম দাস। লিন্ডসে স্ট্রিটের এক জুতোর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রয়েছি।” নিউ মার্কেটের ভিতরে জনারণ্য। তার উল্টো দিকের একটি শপিং মল পুরোটাই পুজোর সাজে সেজেছে। লোকের চাপে মেটাল ডোর প্রায় উল্টে পড়ার উপক্রম।
স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা সারতে এসেছিলেন সালকিয়ার অশোককুমার পাল। গলদঘর্ম হয়ে কেনাকাটা সেরে মোমোয় কামড় দিয়েছেন। অশোকবাবুর স্ত্রী অজন্তার কথায়, “প্রায় পুরো কেনাকাটাই হয়ে গেল।” পুজোর বাজার সেরে এ দিন নিউ মার্কেটের পার্কোম্যাটে বিশ্রাম নিয়েছেন অনেকেই। সেই সুযোগে আশপাশের ছোটখাটো খাবারের দোকানগুলি চুটিয়ে ব্যবসা করেছে। |
ভিড় সামলাতে নিউ মার্কেট এলাকায় তৎপর ছিল পুলিশও। গোটা এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। তৈরি বিশেষ পুলিশ ক্যাম্প। সেখানেই নিউ মার্কেট থানার ওসি শান্তনু সিংহবিশ্বাসের নেতৃত্বে পুলিশকর্মীরা নজরদারি চালাচ্ছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, গোটা এলাকায় ২৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসেছে। তার মধ্যে ৯টি মনিটরিং হচ্ছে পুলিশ ক্যাম্প থেকে। বাকিগুলি থানায় বসে নজর রাখছেন অফিসারেরা। ছিনতাইবাজ-পকেটমার ধরতে টহল দিচ্ছে সাদা পোশাকের পুলিশ। এক পুলিশকর্তা বলেন, “ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া লোকেদের খুঁজে পেতেও সাহায্য করছে ক্যাম্প।” মেয়ে সুপর্ণার সঙ্গে অশোকনগর থেকে নিউ মার্কেটে এসেছিলেন স্বপ্না দাস। কিন্তু ভিড়ে হারিয়ে যান তিনি। পুলিশ ক্যাম্পে এসে যোগাযোগ করার কিছুক্ষণ পরে স্বপ্নাদেবীকে খুঁজে পায় পুলিশ।
দক্ষিণে গড়িয়াহাট বা উত্তরে সাবেক হাতিবাগানে নামী-দামি দোকানের পাশাপাশি ছোট দোকানিরাও চুটিয়ে ব্যবসা করেছেন। ভিড় জমেছিল সল্টলেক, কাঁকুড়গাছি, এলগিন রোড, ক্যামাক স্ট্রিটের শপিং মলেও। তবে লোডশেডিংয়ের কারণে এ দিন দুপুর থেকে উত্তর কলকাতার এক বিরাট অংশে ক্রেতাদের অসুবিধা পোহাতে হয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে গাড়ি ও ভিড় সামলাতে মোতায়েন ছিল বিশেষ পুলিশবাহিনী।
পুজোর ভিড়ের কথা মাথায় রেখে রবিবার বেলা ১২টা থেকে মেট্রো চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। তাই এ দিন দুপুর থেকেই মেট্রো চেপে কেনাকাটা করতে যেতে পেরেছেন মানুষ। মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন রাত পর্যন্ত দু’লক্ষেরও বেশি মানুষ মেট্রোয় চেপেছেন। |