মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে শেষ হয়ে গিয়েছিলেন জন কিটস। ইতিহাস বলছে, যক্ষ্মাই কেড়ে নিয়েছিল এই তরুণ কবির প্রাণ। কিন্তু সম্প্রতি জানা গিয়েছে, কিটসের এই অকাল মৃত্যুর পিছনে অনেকাংশেই দায়ী ছিলেন তাঁর পানাসক্ত মা ফ্রান্সেস কিটস। অন্তত এমনটাই মনে করেন লন্ডনের কীটস ফাউন্ডেশনের প্রধান অধ্যাপক নিকোলাস রো।
নিজের লেখা কিটসের জীবনীতে অধ্যাপক রো জানিয়েছেন, মদে সাংঘাতিক আসক্ত ছিলেন ফ্রান্সেস। এমনকী, কিটসের জন্মের সময়ও মদ্যপানে বিরতি দেননি তিনি। রো-এর দাবি, এই মদ্যপানের ফলে মায়ের গর্ভে থাকাকালীনই এক জটিল রোগে আক্রান্ত হন কিটস। মনোবিদ্যার পরিভাষায় যার নাম ‘ফিটাল অ্যালকোহল সিনড্রোম’ (ফ্যাস)। একই সঙ্গে আরও নানা ব্যাধি বাসা বাঁধে তাঁর শরীরে। সব মিলিয়ে পরবর্তী কালে যা তাঁর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল বলে ধারণা রো-এর। তাই কিটসের মৃত্যুর প্রত্যক্ষ কারণ যক্ষ্মা হলেও, এর পিছনে ফ্রান্সেসের মদ্যপানের অভ্যাসকেই দায়ী করছেন রো। |
কিন্তু কী ভাবে এই সিদ্ধান্তে এলেন তিনি? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি জানাচ্ছেন, কিটসের এমন কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য ছিল, যা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় তিনি ‘ফ্যাস’-এ আক্রান্ত। কেমন সেই বৈশিষ্ট্য? এই বিষয়ে অধ্যাপক ব্রায়ান লিভসলি-র গবেষণার ফলাফলকেই সামনে হাজির করেছেন রো। সেই গবেষণায় লিভসলি দেখিয়েছেন, তরুণ কবির মাথা দেহ অনুপাতে বেশ ছোট ছিল। এ ছাড়া তাঁর উপরের ঠোঁট যেন ঠিকরে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসত। ঠিক যেমনটা দেখা যায় ফ্যাসে আক্রান্তদের শরীরে। শুধু তা-ই নয়, ছোট্টখাট্ট শারীরিক গঠন, অপেক্ষাকৃত স্থূল উর্ধ্বাংশ এবং তুলনায় ছোট নিম্নাংশ সব মিলিয়ে কিটসের এই শারীরিক গঠন আসলে তাঁর জন্মসূত্রে পাওয়া দুর্বলতাই প্রকাশ করত বলে মনে করেন রো। যা আসলে ফ্রান্সেসের মদ্যপানের ‘অবদান’। ভবিষ্যতে এগুলিই কিটসকে যক্ষ্মাপ্রবণ করে তোলে, দাবি রোও-এর।
তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞমহলে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। যেমন লিডস টিচিং হাসপাতালের মনোবিদ তথা শিক্ষক সিমন নেওয়েল মনে করেন, কিটসের শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিঃসন্দেহে ফ্যাসের উপসগের্র সঙ্গে মেলে।
কিন্তু ওই ধরনের বৈশিষ্ট্য সাধারণ মানুষদের মধ্যেও যে দেখা যায়, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ফ্যাস-এ আক্রান্তদের মধ্যে ভাষাগত দুর্বলতা, কম বুদ্ধি ইত্যাদি নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। বলা বাহুল্য এগুলোর একটিও কিটসের মধ্যে ছিল না। ফলে তাঁকে ফ্যাস-এর শিকার বলা আদৌ যুক্তিযুক্ত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেওয়েল।
বিতর্ক চলছে। তবে সব পেরিয়ে এটাই সত্যি, অকালে চলে গিয়েছিলেন জন কিটস। অনেক ক্ষত নিয়ে। আর তাঁর ভবিষ্যতের গুণমুগ্ধদের অনেক আক্ষেপ দিয়ে। |