তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গোষ্ঠীকোন্দলে ফের অশান্তি হল রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজে। প্রথম বর্ষের দুই ছাত্রকে সংগঠনেরই একাংশ মারধর করেছে বলে অভিযোগ তুলে অন্য গোষ্ঠী শনিবার সকালে কলেজের মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। পুলিশ গিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করে। পরে অবশ্য ফের পথ অবরোধ করেন ওই তাঁরা।
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কলেজে টিএমসিপি-র যে দুই গোষ্ঠী রয়েছে তার একটির নেতা ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়। অন্যটিতে রয়েছেন কলেজের ইউনিট কমিটির সম্পাদক সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে-মধ্যেই এই দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে গোলমাল বাধে। কিছু দিন আগে দুই গোষ্ঠীই কলেজে কর্তৃপক্ষের কাছে পরস্পরের বিরুদ্ধে ভর্তি করানোর নামে টাকা তোলার অভিযোগ করেছিল।
বাপ্পার অনুগামীদের অভিযোগ, সৌমিত্র প্রথম বর্ষের দুই ছাত্রকে নিজেদের পরিচয়পত্র তাঁদের কাছে জমা দিতে বলেছিলেন। কিন্তু ওই দুই ছাত্র তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এ নিয়ে রানিগঞ্জ থানায় অভিযোগও করেন বাপ্পারা। কলেজের অধ্যক্ষ শীতল গঙ্গোপাধ্যায় জানান, সৌমিত্রকে গ্রেফতারের দাবিতেই শনিবার কলেজের গেটে তালা লাগিয়ে দেন বাপ্পার অনুগামীরা। অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মীরা তালা খোলার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও তাঁরা শোনেননি। পুলিশ গিয়ে তালা খোলার বন্দোবস্ত করে। অধ্যক্ষ বলেন, “শনিবার বাপ্পা এসে আবার সৌমিত্রকে গ্রেফতারের ব্যবস্থা করার দাবি জানায়। পরিচালন সমিতির সভাপতির সঙ্গে ফোনে কথা বললে কড়া পদক্ষেপ করতে বলেন।”
বাপ্পা অভিযোগ করেন, সৌমিত্রেরা প্রায়শয়ই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র কেড়ে নিচ্ছেন। সামনের বার কলেজে ভোটের সময়ে কারচুপি করার উদ্দেশেই এই কাজ করা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। তাঁর অভিযোগ, “প্রথম বর্ষের ছাত্র জামুড়িয়ার পিনাকী রায় ও বীরভূমের সোমনাথ হাজরা সৌমিত্রের কথা মতো কার্ড না দেওয়ায় বেধড়ক মারধর করে।” সৌমিত্র অবশ্য পরিচয়পত্র জমা রাখা বা মারধরের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা দাবি, “আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “পথ অবরোধ এবং রাজনীতির নামে খামখেয়ালি আচরণ দল অনুমোদন করবে না। এ সব নানা কারণে বাপ্পাকে সংগঠনের ব্লক সভাপতির পদ থেকে অনেক দিন আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সংগঠনে সহ-সভাপতি সোমবার ওই কলেজে যাবেন। তার তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বাপ্পার অবশ্য পাল্টা দাবি, “আমাকে শো-কজ করা হয়েছিল। আমি তার উত্তরও দিয়েছিলাম। কলেজে ছাত্র সংসদের গঠনের সময় অশোক রুদ্রের তৈরি করা তালিকা আমরা মানিনি। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা সংসদে মনোনীত হয়েছি। ব্যক্তিগত আক্রোশেই অশোকবাবু পক্ষপাতমূলক কথা বলছেন। তার জন্যই গোষ্ঠী কলহ তৈরি হয়েছে।” কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি বলেন, “নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল মিটিয়ে নিতে বলা হয়েছে। এ ধরনের বিশৃঙ্খলা মানা হবে না।” |