মহাবালেশ্বরের প্রাচীন মন্দির থেকে পায়ে হেঁটে গ্রাম বাংলার স্নিগ্ধ পরিবেশে খড়-মাদুরের মন্দির। এক সন্ধ্যায় দেখে নেওয়া যাবে সবই। দক্ষিণ ভারতীয় কারুশিল্প থেকে টেরাকোটার কাজ, এ পাড়া ও পাড়া ঘুরলে মিলবে সবেরই দর্শন। আসানসোলের নানা মণ্ডপে এ বার এমন সব থিমেরই আমদানি করেছেন উদ্যোক্তারা।
তামিলনাড়ুর মহাবালেশ্বরে সমুদ্রের কাছে শ’খানেক ছোটবড় মন্দিরের কথা লেখা আছে ইতিহাসে। লোকমুখে কথিত আছে, এই মন্দিরগুলি উঠে এসেছে সমুদ্রগর্ভ থেকে। দক্ষিণ ভারতীয় শিল্পকলার এই অমোঘ নিদর্শনের স্বাদ এ বার পুজোর ক’দিন বাড়ির কাছেই পেতে পারেন আসানসোলের মানুষজন। কল্যাণপুর আদি দুর্গোৎসবের পুজা মণ্ডপটি এ বার সেই আদলেই তৈরি করছেন উদ্যোক্তারা। সেখানকার পাঁচটি মন্দিরকে এ বার হুবহু নিজেদের মণ্ডপে তুলে ধরা হচ্ছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তাদের তরফে প্রশান্ত ভট্টাচার্য জানালেন, প্রতিটি মন্দিরই এখন ভগ্নদশায় পড়ে। সেই ভগ্নমন্দিরের প্রতিচ্ছবিই তুলে ধরা হচ্ছে তাঁদের মণ্ডপে। মেদিনীপুর থেকে শিল্পী এনে মণ্ডপসজ্জার কাজ করাচ্ছেন তাঁরা। প্রাচীন মন্দিরের ধংসাবশেষে মণ্ডপ। তাই প্রতিমাও হচ্ছে মণ্ডপের সঙ্গে মানানসই। বীরভূমের লালমাটির প্রাচীন মূর্তির আদলে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। পঞ্চমীর দিন থেকেই এই মণ্ডপ দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
বাংলার কুটিরশিল্পকে থিম করে এ বার মণ্ডপ সাজাচ্ছেন আসানসোলের গোপালপুর আমরা সবাই সর্বজনীন দুর্গোৎসব পুজো কমিটি। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে খড় দিয়ে। গ্রাম বাংলার কাল্পনিক মন্দিরের আদলে হচ্ছে মণ্ডপ। মণ্ডপের ভিতরেও খড় ও মাদুরের সূক্ষ্ম্য কাজ থাকছে। মণ্ডপ দর্শনার্থীদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় করতে পুরুলিয়ার মুখোশ শিল্পীদের হাজির করছেন উদ্যোক্তারা। বীরভূম থেকে বেশ কয়েক জন শিল্পী এনে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। পুরুলিয়ার শিল্পী মনোরঞ্জন সূত্রধর নানা রকম মুখোশ দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন মণ্ডপ। এই পুজো কমিটির সম্পাদক কেশবচন্দ্র ঘোষ জানান, বাংলার কুটির শিল্পে সমৃদ্ধ তাঁদের পুজো মণ্ডপের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই গড়া হচ্ছে প্রতিমা। টেরাকোটার ছোঁয়া থাকবে প্রতিমায়। গ্রাম বাংলাকে থিম হিসাবে বাছার কারণ প্রসঙ্গে পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা আকাশ মুখোপাধ্যায় জানান, সারা বছর শহরবাসী লোহা, কয়লা আর ধুলোর আস্তরণে হাঁপিয়ে উঠেছেন। গ্রামের স্নিগ্ধ পরিবেশ ও সুনির্মল বাতাসে পুজোর কয়েক দিন শহরবাসী এখানে এসে হাঁফ ছাড়বেন।
শহরের অন্যতম প্রাচীন পুজো আপকার গার্ডেন সর্বজনীন। এ বার ৭৩ বছরে পড়ল এই পুজো। থিম পুজোয় বিশ্বাস নেই উদ্যোক্তাদের। এ বার একটি কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছেন তাঁরা। কমিটির সম্পাদক পৃথ্বিশ রায়চৌধুরী জানান, জাঁকজমকের কোনও ত্রুটি থাকবে না এ বারও। মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক উৎসব। অন্য বছরের মতো এ বারও কলকাতা থেকে শিল্পীদের এনে অনুষ্ঠান হবে বলে জানালেন উদ্যোক্তারা। |