রোগীদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার, এমনকী ধর্ষণ-সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্ত চালিয়ে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন রিপোর্ট দিয়েছে, ওই হাসপাতালের পরিস্থিতি ভয়াবহ। কমিশনের মনে হয়েছে, ওই হাসপাতালের পুরো ব্যবস্থাটাই অত্যন্ত অমানবিক এবং অশালীন।
ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থের মামলায় মানবাধিকার কমিশনকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত ও বিচারপতি অসীম মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চে সেই রিপোর্ট জমা পড়ে। রিপোর্ট দেখার পরে ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতার পাঁচটি সরকারি মানসিক হাসপাতালে সবিস্তার তদন্ত চালানোর নির্দেশ দেয়। শুধু তদন্ত নয়, ওই সব হাসপাতালের রোগীদের থাকা-খাওয়া, সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে পরিকাঠামোর উন্নয়নে কী করা দরকার, মানবাধিকার কমিশন সেই ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশও করবে বলে জানিয়েছে আদালত। কয়েক দিন আগেই লুম্বিনী পার্ক হাসপাতালে এক রোগিণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সেই সময় ওই হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থের মামলা হয়। সেই মামলার সূত্রেই মানবাধিকার কমিশন সেখানে তদন্ত করে। তদন্তের কাজে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না-পেয়ে কমিশনের সদস্যেরা পুলিশের সাহায্য নেন।
কমিশনের প্রতিনিধিরা ওই হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত মৈত্র, অন্যান্য চিকিৎসক এবং নার্সদের প্রধান ছায়া বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন। মানবাধিকার কমিশন সূত্রের খবর, ওই হাসপাতালে একসঙ্গে স্নান করতে হয় পাঁচ-সাত জনকে। তা-ও প্রায় উন্মুক্ত জায়গায়। ওখানে যে-ধরনের রোগীরা থাকেন, তাঁদের দেখভালের পরিকাঠামো কার্যত নেই।
এই রিপোর্ট দেখে শুধু লুম্বিনী নয়, সব মানসিক হাসপাতালের অবস্থা নিয়েই আশঙ্কা প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ। লুম্বিনীর সঙ্গে সঙ্গে অন্য মানসিক হাসপাতালগুলির পরিস্থিতি নিয়েও তদন্ত করার জন্য কমিশনকে দায়িত্বও দিয়েছে তারা। হাইকোর্ট এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন হোমের তদন্তের ভারও দিয়েছে মানবাধিকার কমিশনকে। কিছু দিন আগে গুড়াপের একটি হোমে এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় চলে। ওই মহিলাকে হোম-চত্বরেই কবর দেওয়া হয়। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করেই মানবাধিকার কমিশনকে সব হোমে তদন্ত চালানোর ভার দেয় হাইকোর্ট। সেই তদন্ত এখনও চলছে। |