|
|
|
|
অতিথি শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, অচলাবস্থা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আলিপুরদুয়ার |
ন্যূনতম যোগ্যতাও নেই এমন প্রার্থীকে কলেজের অতিথি শিক্ষক পদের প্যানেলে রাখা হয়েছে আলিপুরদুয়ারের মহিলা মহাবিদ্যালয়ে। অভিযোগ, সেই প্রার্থীকে কলেজে অতিথি শিক্ষক পদে নিয়োগ করতেও চাপ দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি ওই কলেজে ইংরেজি, দর্শন ও সংস্কৃত বিভাগের অতিথি শিক্ষক পদে কয়েক জনের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। সেখানে ইংরেজি বিভাগে এক প্রার্থীকে ইন্টারভিউয়ের পরে প্যানেলে দ্বিতীয় স্থানে রাখা হয়েছে। সেই প্রার্থীর অবশ্য অনার্স নেই। তবে তিনি রাজ্যের বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি নিয়ে এমএ পাশ করেছেন বলে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি। তবে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার স্বপন রক্ষিত বলেন, “ওই কলেজে কী হয়েছে তা জানি না। তবে কলেজে যে কোনও শিক্ষক পদেই নিয়োগের ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তরে অন্তত ৫৫ শতাংশ নম্বর যেমন আবশ্যিক, তেমন স্নাতক স্তরে অনার্সও থাকতেই হবে।”
অথচ এরপরেও ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তৃণমূলের শিক্ষা সেলের রাজ্য সহ সভাপতি দিলীপ রায় ওই প্রার্থীকে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে দাবি। সেই দাবি মানতে না পেরে বুধবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমিতাভ রায় পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে পরিচালন সমিতির আরও ছয় সদস্যও পদত্যাগ করেছেন। দিলীপবাবুর কথায়, “গোটা ব্যাপারটাই একটা চক্রান্ত। তবে ওই প্রার্থীর ন্যূনতম যোগ্যতা রয়েছে কি না, তা তো কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষেরই দেখা উচিত ছিল। তিনি ইন্টারভিউয়ের সময়ে তা দেখেননি কেন?”
অমিতাভবাবুর জবাব, “অতিথি শিক্ষকদের জন্য ওয়াক-ইন ইন্টারভিউ হয়েছিল। তখন ওই প্রার্থী এমএ পাশের শংসাপত্র দেন। তাতে প্রয়োজনীয় নম্বর রয়েছে দেখেই ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। তখন অত খতিয়ে দেখার সময় ছিল না। ফলে তিনি প্যানেলে দ্বিতীয় স্থানে চলেও আসেন।”
কিন্তু প্যানেল তৈরির সময়েও কেন বিষয়টি চোখ এড়িয়ে গেল? অমিতাভবাবু স্বীকার করেন, “এটা আমাদের ত্রুটি। তবে পরে বিষয়টি নজরে আসায় পুনর্বিবেচনা করার কথা ভাবছিলাম। ইতিমধ্যেই ওই প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য দিলীপবাবু বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। তা অসহ্য হয়ে উঠেছে বলেই পদত্যাগ করেছি।” কলেজের ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা দিলীপবাবু অনৈতিক ভাবে চাপ দিচ্ছেন অভিযোগ তুলে এবং অমিতাভবাবুকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ক্লাস বয়কট শুরু করেছেন। অমিতাভবাবুর দাবি, “ক্লাস বয়কটের ফলে কলেজ অচল হয়ে পড়েছে। সকলেই দিলীপবাবুর পদত্যাগ দাবি করছেন। শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। দেখা যাক কী হয়!” শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, শীঘ্রই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। কলেজের টিচার্স কাউন্সিলের সদস্য ইন্দ্রমাধব দাস বলেন, “দিলীপবাবু অন্যায় ভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের উপরে চাপ দিচ্ছেন। প্রতিবাদে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি। কলেজে এই দিন ক্লাস হয়নি।” পাশাপাশি, পরিচালন সমিতি থেকে পদ্যত্যাগ করা ছাত্রী প্রতিনিধি দেবশ্রী ভট্টাচার্য বলেন, “কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের উপরে অন্যায় চাপ দেওয়া চলবে না। তাঁর পদত্যাগ পত্র তুলে না নেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল ক্লাস বয়কট হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মৃদুল গোস্বামী বলেন, “কলেজে দিলীপবাবু রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলে শীর্ষ নেতাদের জানাব।” ওই পরিচালন সমিতির সদস্য তৃণমূল নেতা মিহির দত্তও বলেন, “আমি সমিতি থেকে পদত্যাগ না করলেও দিলীপবাবুর অপসারণ চাই।” |
|
|
|
|
|