|
|
|
|
দাসেরবাঁধ মামলা |
প্রশান্ত-সহ চার জনের জামিনের আর্জি নাকচ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন মন্ত্রী তথা গড়বেতার সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের ভাই প্রশান্ত ঘোষের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল মেদিনীপুর আদালত। সঙ্গে এই মামলায় জেলবন্দি আরও ৩ জনের জামিনের আবেদনও খারিজ হয়েছে।
শুক্রবার মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অভিজিৎ সোমের এজলাসে এই মামলার দিন নির্দিষ্ট ছিল। শুরুতে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী রানা গঙ্গোপাধ্যায় জেলবন্দি মদন সাঁতরা, বৈদ্যনাথ সাঁতরা ও শিবরাম সিংহ এই ৩ জনের জামিনের আবেদন জানান। তাঁর বক্তব্য, “ন’বছর আগে ঘটনার পরপরই যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, সেখানে এঁদের নাম নেই।” পরে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী বিশ্বনাথ ঘোষ আদালতের কাছে প্রশান্তবাবুর জামিনের আবেদন জানান। এ ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য ছিল, “প্রশান্ত ঘোষ কোনও রাজনৈতিক দলের লোক নন। সুশান্ত ঘোষ দাদা বলেই তাঁকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।” শুনানি-পর্বে বিশ্বনাথবাবু জানান, “জামিন পেয়ে প্রশান্তবাবু পালিয়ে যাবেন, এমনটা হবে না। তিনি ব্যবসা করেন।” সরকারপক্ষের আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য অবশ্য প্রাক্তন মন্ত্রীর ভাই-সহ ৪ জনেরই জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, “আগেই কিরীটি রায় নামে এই মামলার এক আসামী জামিন পেয়েছিলেন। পরে আর মামলার দিনে আদালতে আসেননি। তা ছাড়া, প্রশান্ত ঘোষকে পুরী থেকে ধরা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন পালিয়ে বেরাচ্ছিলেন।” |
|
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক অভিজিৎ সোম ৪ জনেরই জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। আগামী ২১ নভেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন তিনি। ওই দিন মামলার চার্জগঠন সংক্রান্ত শুনানি হতে পারে। শুক্রবারই মেদিনীপুর আদালতে দাসেরবাঁধ কঙ্কাল মামলার চার্জগঠন সংক্রান্ত শুনানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে তা হয়নি। আদালত সূত্রে খবর, জামিনে মুক্ত এক অভিযুক্ত কিরীটি রায়ের গ্রেফতারি পরোয়ানার উপর সাময়িক স্থগিতাদেশ রয়েছে। এই সংক্রান্ত আবেদন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারাধীন। তাই শুনানি শুরু হয়নি।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ দাসেরবাঁধ মামলায় ধৃতদের মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে হাজির করা হয়। এই মামলায় মোট ২২ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃতদের মধ্যে সুশান্ত ঘোষ-সহ ১৪ জন জামিনে রয়েছেন। ৮ জন আছেন জেল হেফাজতে। জেলবন্দি ৮ জনকেই এ দিন আদালতে হাজির করা হয়েছিল। ছিলেন জামিনে মুক্ত ১২ জন। অনুপস্থিত ছিলেন কিরীটি রায় ও অর্ণব ঘোষ। অর্ণব ঘটনার সময় নাবালক ছিলেন। তাই তাঁর বিচার চলছে জুভেনাইল কোর্টে।
এ দিন আদালতে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী বলেন, “প্রশান্ত ঘোষকে সিআইডি নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল। হেফাজতে থাকাকালীন কী কী মিলেছে, আদৌ কিছু মিলেছে কি না, তা জানানো হয়নি।” সরকারপক্ষের আইনজীবী অবশ্য বলেন, “যদি এ ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হয়, তাহলে তার কপিও দেওয়া হবে।” গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর এই মামলায় চার্জশিট পেশ করেছিল সিআইডি। তারপর চার্জগঠন হয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। তবে, বিভিন্ন কারণে মামলাটি পিছিয়ে যাচ্ছে। সরকারপক্ষের আইনজীবী এ দিনও বলেন, “আমরা চাই দ্রুত মামলার চার্জগঠন হোক।”
এ দিকে, মেদিনীপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক সময় রায়ের কাছে এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত শুভাশিস পাইনের আগাম জামিনের আবেদন জানানো হয়েছে। শুভাশিসবাবু এক সময়ে এসএফআইয়ের নেতা ছিলেন। শুক্রবারই এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে হয়নি। শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে ১২ অক্টোবর। এ দিন আদালত থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্তবাবু বলেন, “কোনটা সত্যিকারের আন্দোলন, মানুষের মঙ্গলের জন্য, আর কোনটা নিজের বাজার গরম করার আন্দোলন মানুষ সবই বুঝছেন।” সুশান্তবাবুর মতে, “কেন্দ্রীয় সরকারের যে সব সিদ্ধান্তের এখন প্রতিবাদ করছেন মুখ্যমন্ত্রী, তিনি নিজেই সেগুলির সঙ্গে যুক্ত। সবই জানতেন।” |
|
|
|
|
|