যাবতীয় সংশয়ে জল ঢেলে সচিন তেন্ডুলকর ঘোষণা করে দিলেন, আগামী ২০১৫ বিশ্বকাপ তিনি খেলছেন না! টানা সম্ভব নয়। বরং অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের আগেই তিনি অবসর নিয়ে নিচ্ছেন। “পরের বিশ্বকাপ খেলার মতো অবস্থায় আমি নেই। সেটা সম্ভব হবে বলেও মনে হয় না। তাই সোজাসুজিই বললাম। আমি এক একটা সিরিজ ধরে এগোতে চাই। কারণ আমাকে নিয়ে টিম কী ভাবছে, আমি নিজের ভেতরে ভেতরে কী ভাবছি, খেলার মতো মোটিভেশন আর পাচ্ছি কি না...সব দেখা দরকার,” শুক্রবার ‘টাইমস নাও’ চ্যানেলের সঞ্চালক অর্ণব গোস্বামীকে বলে দিয়েছেন সচিন। শুধু তাই নয়, ক্রিকেটবিশ্বে একশো আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির মালিক এ-ও মেনে নিয়েছেন যে, এই উনচল্লিশে খুব বেশি ক্রিকেট হয়তো তাঁর মধ্যে আর বেঁচেও নেই। আগামী মাসেই ঠিক করে ফেলবেন নিজের ক্রিকেট-ভবিষ্যৎ। |
হালফিলে তাঁর ফর্ম নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে দেশের ক্রিকেটমহলে। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে তিন-তিন বার বোল্ড হওয়ার দৃশ্যই যাবতীয় লাভাস্রোতের উৎসমুখ। সুনীল গাওস্কর থেকে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ কেউ রেহাই দেননি ‘লিটল মাস্টার’কে। গাওস্করের রায় ছিল বয়সের ভারে পা নড়ছে না সচিনের। শুনে কী মনে হয়েছিল? “শুধু নেতিবাচক মন্তব্যগুলোকেই কেন ধরব বলুন তো? গাওস্কর তো আমাকে নিয়ে অনেক ভাল ভাল কথাও বলেছেন,” সাফ উত্তর সচিনের। সঙ্গে যোগ করেছেন, “একটা প্রতিবেদন নিয়ে পড়ে থেকে, তার থেকে কিছু একটা বার করার কোনও যুক্তি আমি দেখি না। বিশেষ করে, যে লিখেছে সে-ই যখন ওখান থেকে একটা কিছু বার করার চেষ্টা করছে। আমার মনটা থাকা উচিত খেলায়। চেষ্টা করা উচিত কী ভাবে নিজেকে আরও উন্নত করা যায়। ক্রিকেটে শেখার কোনও শেষ নেই। সারা জীবন ছাত্র থেকে যেতে হয়।”
আর মহম্মদ আজহারউদ্দিন? তিনিও তো বলেছেন, বয়স বাড়ায় কমে যাচ্ছে সচিনের রিফ্লেক্স। আজহার-প্রসঙ্গে সরাসরি জবাব দেননি সচিন। বরং তুলে এনেছেন স্যর ডনের প্রসঙ্গ। বলেছেন, “আমি যখন স্যর ডনের সঙ্গে ওঁর নব্বইতম জন্মদিনে দেখা করি, উনি বলেছিলেন, সব ব্যাটসম্যানই তিরিশ পেরোলে পাল্টে যায়। সেটাই স্বাভাবিক। আমার মনে হয়, তিরিশ পেরোনোর পরেও ন’টা বছর আমি ভাল খেলেছি। উনচল্লিশে তো আর উনিশের রিফ্লেক্স থাকবে না। বয়স বাড়লে সবাই মন্থর হয়। আমিও হয়েছি।” তাঁকে নিয়ে সমালোচনার উত্তর তিনি মুখে দেন না। শুধু তাই নয়, ম্যাচ গড়াপেটা নিয়ে যখন সবচেয়ে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট, ক্রিকেটের ‘ঈশ্বর’ চুপ থেকেছেন। কেন? “দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে পছন্দ করি না। যে ব্যাপারটা আমি জানি না, সেটা নিয়ে কথা বলব কেন? বিশেষ করে ব্যাপারটা যখন স্পশর্কাতর।”
সচিনের মনে হচ্ছে, দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে ক্রিকেট খেলার পর অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর পক্ষে ‘বেশ কঠিন’ হবে। “অবসরের মুহূর্তটা মেনে নেওয়া সহজ হবে না। কারণ অবসর নেওয়ার মতো অবস্থা আমার ক্রিকেটজীবনে কখনওই আসেনি। শুধু ২০০৫ সালে টেনিস এলবো হওয়ার পর মনে হয়েছিল, আমার খেলা বুঝি শেষ। যাই হোক, এই মুহূর্তে অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। কিন্তু নভেম্বরে যখন খেলতে নামব, নিশ্চয়ই ভেবে দেখব।”
কিন্তু বিশ্বপর্যায়ের ক্রিকেটে নিজস্ব মান ধরে রাখতে চেষ্টা কি একটু বেশিই করে ফেলছেন না? বিশেষ করে যখন তিনি কেরিয়ারের এমন অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে? “গত বাইশ বছর ধরেই তো আমি নিজেকে নিজেই আরও ঠেলছি। আরও বেশি খাটছি দেশের হয়ে খেলার জন্য। যা আমার কাছে বরাবরই স্বপ্ন ছিল। বাড়তি চেষ্টা না করার কোনও কারণ আমি দেখি না। আর না করলে আপনারাই তো বলবেন, কেন বেশি খাটছি না?” সহাস্য উত্তর সচিনের। সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সংযোজন, “আসলে দেশের হয়ে খেলার ব্যাপারে কখনও সমঝোতা করিনি। করবও না। খেলা ছাড়ার পর কী করব, জানা নেই। কিন্তু কোনও দিন যেন আফসোস না হয় ভেবে যে, কেন আমি নিজের সেরাটা দিইনি।” |