পার্সেলবোমা বিস্ফোরণ করে দক্ষিণ বাকসাড়ার বাসিন্দা, মানবাধিকার কর্মী চৈতালি সাঁতরাকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল কয়েক মাস ধরেই। এ জন্য কয়েক জন যুবককে টাকার লোভ দেখিয়ে কাজে নামানো হয়। একটি ঘরও ভাড়া নেওয়া হয়েছিল বোমাটি বানানোর জন্য। পার্সেলবোমা নিয়ে যাওয়ার জন্য কেনা হয়েছিল মোটরবাইকও।
বুধবার গভীর রাতে এই ঘটনায় ধৃত শুভঙ্কর দাস, বিশ্বজিৎ মাজি ও অভিষেক রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, শুভঙ্করের বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে কোনা পূর্ব পাড়ায় ঘর ভাড়া নেওয়া হয়। বোমা বানানোর জন্যই নিজের গেঞ্জি কারখানার এক কর্মীকে দিয়ে ৫০০ টাকায় ঘরটি ভাড়া নিয়েছিল শুভঙ্কর। ঘরটি ভাড়া নেওয়া হয় বাবুয়া দাসের নামে। বৃহস্পতিবার বাবুয়াকে পুলিশ আটক করে। পুলিশের দাবি, বাবুয়া স্বীকার করেছে, ওই ঘরে বানানো হয়েছিল বোমাটি।
শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, একটি কলোনি এলাকায় অনেক দরমা দেওয়া টালির চালের ঘরের শেষ প্রান্তে দশ ফুট বাই আট ফুটের ওই ঘর। দরজায় তালা নেই। ভিতরে একটি সাইকেল। ঘরের মাঝখানে নীল প্লাস্টিক টাঙানো। মেঝেতে পাতা সাদা চাদর। এক কোণে পড়ে বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র, মোবাইলের সার্কিট বোর্ড-সহ যন্ত্রাংশ, জলের বোতল ও সিগারেটের টুকরো। পুলিশের দাবি, ওই সব জিনিস দেখে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে বোমাটি বানানো হয় ওই ঘরেই। |
কিন্তু ওই ছোট ঘরেই যে রাজ্যের দ্বিতীয় প্রাণঘাতী পার্সেলবোমা বানানো হয়েছে, তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না ঘরের মালিক থেকে ভাড়াটেরা। মালিক নমিতা দাস বলেন, “গত মাসে ওই ছেলেটি বলল ভাড়া চাই। কিন্তু এমন কাণ্ড করবে, ভাবিনি।” স্বপন রায় নামে এক ভাড়াটে বলেন, “দেখছিলাম গত পনেরো-কুড়ি দিন ধরে রাতে অনেকে যাতায়াত করছে। ফিসফিস করে কথা বলছে। সঙ্গে পাড়ার ছেলে শুভঙ্কর থাকায় খারাপ কিছু মনে হয়নি।”
তদন্তে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরেই বোমা তৈরির পরিকল্পনা করে শুভঙ্কর। এ জন্য কোনা চেকপোস্টের বাসিন্দা ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বিশ্বজিৎ মাজি ও বাবাই দাসকে গেঞ্জি কারখানার কাজে লাগিয়েছিল। ওই বোমা চৈতালিদেবীর বাড়িতে নেওয়ার জন্য সঙ্গে নিয়েছিল অভিষেক রায় ওরফে ছোটকাকে। ছোটকার বাড়ি শুভঙ্করের বাড়ির পাশে। এ দিন শুভঙ্করের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, চৈতালিদেবীর পড়শি, মূল চক্রান্তকারী ধৃত দেবাশিস দে দু’বার শুভঙ্করের বাড়িতে আসেন। কিন্তু সে যে ওই মহিলাকে খুনের জন্য শুভঙ্করকে ব্যবহার করবে, তা বাড়ির লোকজন বুঝতে পারেননি। |