|
|
|
|
গ্যাসে কোপ |
সঙ্কটের মুখে মিড-ডে মিল, মেনে নিচ্ছে কেন্দ্রও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে ভর্তুকি দেওয়া না হলে মিড-ডে মিল তৈরির জ্বালানি হয়তো জোগাড় হয়ে যাবে, কিন্তু তাতে স্কুল পড়ুয়াদের খাবারের উপরেই কোপ পড়তে পারে। এই অভিমত কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রককে লেখা চিঠিতে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। গ্যাস দুর্মূল্য হওয়ায় স্কুল পড়ুয়াদের রান্না করা খাবার দেওয়া যে কঠিন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সে কথা বলছেন।
মিড-ডে মিল কোনও বাণিজ্যিক কাজ নয়। তাই এই প্রকল্পের জন্য কম দামে সিলিন্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে আবেদন জানানো হয়েছে সম্প্রতি লেখা ওই চিঠিতে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক অবশ্য জানিয়েছে, এই ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত মাসে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বছরে ছ’টি সিলিন্ডারে ভর্তুকি দেওয়া হবে। তার পরে যার যত সিলিন্ডার প্রয়োজন, তা কিনতে হবে বাজার দরে। এই সিদ্ধান্তের জেরে মিড-ডে মিল প্রকল্প নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের রান্না করা খাবার দেওয়া হয়। বিরাট সংখ্যক গরিব পড়ুয়া এবং তাদের অপুষ্টির কথা ভেবেই এই প্রকল্প চালু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, অন্তত এক বেলা কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে তাদের স্কুলমুখী করা। এই কাজে অনেকটা সাফল্যও পেয়েছে মিড-ডে মিল প্রকল্প। কিন্তু মিড-ডে মিলের জন্য রান্নার গ্যাসেও ভর্তুকি উঠে যাওয়ায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎই প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমনিতে মিড-ডে মিল প্রকল্পে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাথা পিছু দৈনিক বরাদ্দ ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। আর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য ৪ টাকা ৬৫ পয়সা। এর মধ্যে জ্বালানির খরচ ৫০ পয়সা। ফলে যা বাঁচে, তাতে খুব পুষ্টিকর খাবার জোগানো এমনিতেই কঠিন। এত দিন মিড-ডে মিলের জন্য ৪০০ টাকা দরে সিলিন্ডার পাওয়া যেত। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে কলকাতায় ওই প্রকল্পের জন্য একটি সিলিন্ডারের দাম হবে ১১০৯.৫০ টাকা। এর জেরে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রককে লেখা চিঠিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশে অন্তত ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে মিড-ডে মিল রান্না হয় গ্যাসে। এই প্রকল্পের জন্য এ বছর ১১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মন্ত্রকের বক্তব্য, বরাদ্দ এমনিতেই কম। তার উপরে সিলিন্ডারের দাম এতটা বেড়ে গেলে ওই অর্থের অনেকটাই চলে যাবে জ্বালানির পিছনে। টান পড়বে খাবারের মানে।
রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর এই সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রকে। সেই চিঠির উত্তর আসেনি এখনও। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল শুক্রবার বলেন, “পেট্রোলিয়াম এবং অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা চাই, হয় মিড-ডে মিলের জন্য কম দামে দেওয়া সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানো হোক, নয়তো বরাদ্দ বাড়ানো হোক।” ওই দুই মন্ত্রক কী জানিয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানাননি সিব্বল। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে রাজনৈতিক স্তরে।
এ দিনই কলকাতায় গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা। দফতর সূত্রের খবর, মিড-ডে মিল প্রকল্পে যাতে কোপ না পড়ে, তা লক্ষ্য রেখে আপাতত বর্ধিত দামে সিলিন্ডার কেনা হবে বলে ঠিক হয়েছে ওই বৈঠকে। ছাত্রছাত্রীদের রান্না করা খাবার দিতে প্রয়োজনে অন্য খাত থেকেও টাকা নেওয়া হবে বলে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দফতরের কর্তারা। |
|
|
|
|
|