শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় সিইএসসি-র বিদ্যুতের স্তম্ভ (ল্যাম্পপোস্ট) থেকে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সম্প্রতি তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সংস্থার কর্তারা জানতে পেরেছেন, কোনও কোনও এলাকায় রাস্তার ধারে বিদ্যুতের স্তম্ভগুলির দখল নিয়েছে এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা। স্তম্ভগুলি নিলামে তুলে মোটা টাকা কামাচ্ছে তারা। আর চড়া দরে সেগুলি নিচ্ছে যারা, তারা চুরি করা বিদ্যুৎ বিক্রির রমরমা ব্যবসা ফেঁদে বসেছে।
পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে, বিদ্যুতের অভাব না-থাকলেও পুজোয় সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে লোডশেডিং-এর আশঙ্কা করছেন সংস্থার কর্তারা। সিইএসসি-র কর্তারা হিসেব কষে দেখেছেন, এ বার পুজোয় প্রতি দিন কম করে ১৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে। এর মধ্যে ৭৫০-৮০০ মেগাওয়াট নেওয়া হবে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে। ওই বিদ্যুৎ পেতে সিইএসসি-র সমস্যা হবে না বলেই কর্তাদের ধারণা। কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা, চুরি অব্যাহত থাকলে পুজোয় ‘ওভারলোড’ হয়ে কোনও এলাকায় ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যেতে পারে। আর তখন তার প্রভাবে অন্য ফিডারও খারাপ হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুজোমণ্ডপেও বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সিইএসসি-র কর্তারা জেনেছেন, বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুতের স্তম্ভগুলি বেআইনি ভাবে এক-এক জন ‘বিদ্যুৎ-মাফিয়া’ নিয়ন্ত্রণ করছে। ওই সব স্তম্ভ থেকে বিদ্যুৎ চুরি করে তারা বাড়িতে বা রাস্তার ধারের অস্থায়ী দোকানে সরবরাহ করে। বিনিময়ে মাসে ১০০-২৫০ টাকা নেয়। ওই এলাকায় কেউ আইন মেনে মিটার নিয়ে বিদ্যুৎ নিতে গেলে ওই মাফিয়ারাই তাঁদের বাধা দেয়। এ ভাবে বিদ্যুৎ চুরি করে বিক্রির মাধ্যমে কোনও কোনও এলাকায় মাফিয়ারা লক্ষাধিক টাকা আয় করছে বলে সিইএসসি-র কর্তারা জেনেছেন। তাঁদের ধারণা, এই কারবারের পিছনে প্রভাবশালী চক্র থাকতে পারে।
গত বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ধুন্ধুমার বাধে। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে বেশ কয়েক জনের মৃত্যুও হয়। তার পর থেকে কলকাতা-সহ বণ্টন এলাকায় বিদ্যুৎ চুরি রুখতে পুলিশের সঙ্গে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির যৌথ অভিযান কার্যত বন্ধ। সরকারের তরফে তাদের কাছে পরোক্ষে এমনই বার্তা গিয়েছে বলে সংস্থা সূত্রে খবর। এতে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন এলাকা এবং সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুৎ চুরি আরও বেড়ে গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই জনবিন্যাসের কারণে এলাকাগুলি এতই স্পর্শকাতর যে, অশান্তির ভয়ে সেখানে বিদ্যুৎ চুরি বন্ধের অভিযান চালাতে কেউ সাহস করছেন না।
আর বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির এই ভীতি আলোকোজ্জ্বল শারদীয় উৎসবে অন্ধকারের ভয়টাই ফিরিয়ে আনছে। |