পুজোর মুখে মিছিল-জমায়েতের নামে যাঁরা শহর অচল করে দিতে চাইছেন, তাঁরা সাবধান! তাঁরা যখন জনতাকে দুর্ভোগে ফেলতে ব্যস্ত, সেই সুযোগে সন্তর্পণে তাঁদের পকেট অচল করে দিয়ে দুর্দশায় ফেলে দিতে পারে নিপুণ শিল্পীরা!
এই শিল্পকর্মের নমুনাই টের পেয়েছেন বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের কিছু তরুণ নেতা। রাজ্য জুড়ে, বিশেষত কলকাতা শহরে আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার রাজপথে মিছিল করে ‘লালবাজার অভিযান’ করার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। মিছিল করা যায়নি পুলিশের আপত্তিতে। এবং তখনই তাঁরা টের পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলার হালটা ঠিক কী রকম! যার জন্য শুক্রবার ফের পুলিশেরই দ্বারস্থ হতে হয়েছে!
রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ঝাঁটা-জুতো হাতে মিছিল বার করার চেষ্টা করতেই হিন্দ সিনেমার সামনে বৃহস্পতিবার বিকালে ফ ব-র কর্মী-সমর্থকদের আটকে দেয় পুলিশ। বাধা পেয়ে তাঁরা পুলিশের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন। একে বৃষ্টি, তায় মিছিল সামাল দিতে পুলিশের তখন দফারফা। মিছিলকারীদের গ্রেফতার করে দ্রুত রওনা করে দেওয়া হয় প্রেসিডেন্সি জেলের পথে। তখনই ফ ব নেতারা আবিষ্কার করেন, ওই অল্প সময়ে কুকর্মটি হয়ে গিয়েছে! ফ ব-র কলকাতা জেলা সম্পাদক মইনুদ্দিন শামসের হাতঘড়িটি খোয়া গিয়েছে! কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত রায়ের পকেট থেকে মানিব্যাগ উধাও। ছাত্র ব্লকের কলকাতা জেলা সম্পাদক হৃষীকেশ রায়ের মোবাইল বেপাত্তা!
আন্দোলনের ঝক্কি মিটিয়ে এ দিন বৌবাজার থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন দেবব্রত-হৃষীকেশ।
মইনুদ্দিনের বাড়ি একবালপুরে। ডাকসাইটে এলাকা। তাঁরই সঙ্গে এমন ঘটল? মইনুদ্দিনের কথায়, “যখন পুলিশ আমাদের বাধা দিচ্ছিল আর আমরা প্রতিবাদ করছিলাম, তখনই হয়তো ঘটেছে ঘটনাটা। ওর মধ্যেই তার মানে দুষ্কৃতীরা ঢুকে গিয়েছিল।” তিনি অবশ্য পুলিশে যাননি। মইনুদ্দিনের বক্তব্য, “কী আর বলব? থানায় যাইনি। আমাদের দু’জন অভিযোগ জানিয়েছে।” মিছিল-জমায়েতের ভিড়ে হাত-সাফাই অবশ্য একেবারে অভিনব ঘটনা নয়। ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে এমন অভিজ্ঞতা তৃণমূল কর্মী বা সাংবাদিকদের আছে। এ বার দুষ্কৃতীরা বামপন্থীও হয়েছে, এই যা! এই সপ্তাহের গোড়ায় দিল্লিতেও হানা দিয়েছিল এই রোগ। যন্তর মন্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নায় বক্তৃতা দেওয়ার পরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায় দেখেন, তাঁর ওয়ালেট খোয়া গিয়েছে। যার মধ্যে ছিল ডেবিট কার্ড, যা ব্যবহার করে টাকাও তোলা হয়েছে। সাংসদ সৌগতবাবু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়েছেন।
বামপন্থী দেবব্রতের অ্যাকাউন্টে টাকা তত ছিল না। তবু এটিএম কার্ড যে হেতু চুরি গিয়েছে, পুলিশকে তা জানিয়েছেন। দেবব্রত বলছেন, “পুলিশকে বলেছি, আপনারা মিছিল করতে দিলেন না। গ্রেফতার করলেন। আবার ছিনতাইবাজও ছেড়ে রেখেছিলেন!” তাঁর কথা শুনে, বলাই বাহুল্য, পুলিশ অফিসাররাও হেসেছেন। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের সরস মন্তব্য, “মিছিলে যোগদানকারীদের মধ্যেই কেউ হাত-সাফাই করেছে।” |