ভাঙড় কলেজের পরে খাস কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজ। কিছু দিন আগে ভাঙড় কলেজের স্টাফরুমে ঢুকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরে চোটপাট করেছিলেন ও এক শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুড়ে মেরেছিলেন ওই এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। আর শুক্রবার চারুচন্দ্র কলেজে নিজেদের স্টাফরুমে এক দল পড়ুয়ার কাছে অপমানিত হলেন শিক্ষকেরা। প্রতিবাদে ক্লাস বয়কট করে বিক্ষোভ দেখান সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশ।
শুক্রবার দুপুরের ওই ঘটনায় চারুচন্দ্রের পড়ুয়াদের একাংশের সঙ্গে কিছু বহিরাগতও জড়িত বলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগ মূলত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নিলে তাঁরা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন ওই কলেজের শিক্ষকদের অনেকেই।
চারুচন্দ্র কলেজের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার-ইন-চার্জ) কৃষ্ণনাথ নন্দী এ দিন একটি কাজে কলেজে যান। কলেজ সূত্রের খবর, কৃষ্ণনাথবাবুর পরিচিত এক ব্যক্তি ওই কলেজে একটি ছাত্রবৃত্তি চালু করতে চান। কৃষ্ণনাথবাবু সে-কথা জানাতেই কলেজে গিয়েছিলেন। তিনি যখন কলেজের শিক্ষকদের বসার ঘরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সেই সময় এক দল ছাত্র ও বহিরাগত কিছু যুবক আচমকা সেখানে ঢুকে পড়েন। তাঁরা জানতে চান, ওই প্রাক্তন শিক্ষক কলেজে শিক্ষকদের বসার ঘরে কেন? কৃষ্ণনাথবাবুর সঙ্গে ওই যুবকেরা দুর্ব্যবহার করেন বলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ।
ওই শিক্ষকেরা পরে জানান, কৃষ্ণনাথবাবু তাঁর এক কালের সহকর্মীদের সঙ্গে চা খেয়েই চলে যাবেন বললেও যুবকেরা তা মানতে চাননি। স্টাফরুমে উপস্থিত অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা কৃষ্ণনাথবাবুর হয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁদেরও অপমান করা হয়। উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষিকা রীতা পাল বলেন, “নিজের বিভাগের স্টাফরুমে না-বসে আমি কেন সাধারণ স্টাফরুমে বসে আছি, ওরা তার কৈফিয়ত চায়। এই প্রশ্নের কোনও উত্তর ওদের দেব না বলায় আমাকে ওরা কলেজে ঢুকতে দেবে না বলে শাসায়।” পরে স্টাফরুমের বাইরে ওই দলটি স্লোগান দিতে থাকে। তখনও তারা কৃষ্ণনাথবাবুর নামে অপমানজনক কথা বলতে থাকে বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।
গোটা ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক সমর্থকের বিরুদ্ধে। শুধু এ দিনের ঘটনাতেই নয়, বহিরাগত ওই সমর্থক বিভিন্ন সময়ে কলেজের ভিতরে গোলমাল পাকাচ্ছেন বলে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একটা বড় অংশের অভিযোগ। এক শিক্ষক বলেন, “কলেজ চলাকালীন ওই যুবক আচমকা ক্লাসঘরের দরজা খুলে দেখে, ঠিকঠাক ক্লাস নেওয়া হচ্ছে কি না। সে যে কলেজের সঙ্গে কী ভাবে জড়িত, তা জানি না। তবু আমরা কিছু বলছিলাম না। কিন্তু এ দিন ব্যাপারটা সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়েছি আমরা।”
টিএমসিপি-র নেতারা অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সংগঠনের এক নেতা বলেন, “প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কলেজে ঢুকে সিপিএমের ইউনিট খোলার চেষ্টা করছেন। তাই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।” তাঁর মতে, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
অধ্যক্ষ মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় এ দিন কলেজে ছিলেন না। সন্ধ্যায় তিনি বলেন, “যা শোনার, টেলিফোনেই শুনেছি। শনিবার কলেজে গিয়ে গোটা ঘটনা বিশদ ভাবে শুনব এবং দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।” |