মিছিলের চক্রব্যূহেই পথহারা কাজের শহর
পুজোর মুখে মিছিল-সমাবেশে আরও এক বার লণ্ডভণ্ড হল শহরের কেন্দ্রস্থল।
শহিদ মিনারে একটি ধর্মীয় সংগঠন এবং কলেজ স্কোয়ারে এক ছাত্র সংগঠনের সমাবেশ। আর সেই জোড়া ধাক্কায় শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অচল হয়ে রইল কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা।
পুজোর মুখে প্রায়দিনই এ ভাবে ধর্মতলা চত্বরে মিছিল-সমাবেশ বন্ধ করতে অবশেষে উদ্যোগী হয়েছেন পুলিশকর্তারা। এ দিন সন্ধ্যায় কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “৮ অক্টোবর থেকে নতুন করে ধর্মতলা চত্বরে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া বন্ধ থাকবে।” তবে লালবাজার সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই যে সব সংগঠন পুজোর আগে ধর্মতলা চত্বরে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে, তাদের অনুরোধ করা হবে অন্যত্র সমাবেশ বা মিছিল করতে।” এ দিকে, ১০ তারিখ কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিল করে ধর্মতলায় একটি সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে ‘অ্যাবেকা’র। সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, আগেই অনুমতি পেয়ে গিয়েছে তারা।
যানজটের দুর্গতিতে স্বয়ং দুর্গতিনাশিনী। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ভোগান্তির ছবিটা অবশ্য এ দিনও ছিল একই রকম। জোড়া সমাবেশের জেরে থমকে গেল যান চলাচল, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ থাকল এস এন ব্যানার্জি রোড, জওহরলাল নেহরু রোড-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। তীব্র যানজট ছড়াল হাওড়া থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত। নাস্তানাবুদ মানুষ গরমে ঘেমেনেয়ে হেঁটেই স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরলেন। স্কুলপড়ুয়ারা বাড়ি ফিরল নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক দেরিতে। রাস্তায় গাড়ি না পেয়ে মেট্রো ধরতে গিয়েও ফের দুর্ভোগ। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে হাঁসফাঁস অবস্থা সেখানেও। প্রায় প্রতিটি স্টেশনেই মেট্রো দাঁড়িয়ে থাকে নির্ধারিত সময়ের বেশি।
কলকাতা পুলিশ জানায়, দুপুর ১টা থেকে শহিদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ-সমাবেশে জমায়েত হন কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠনের সদস্যেরা। তাঁদের ঘোষিত কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশকর্তারা ধর্মতলা মোড় থেকে হো চিন মিন সরণির মুখ পর্যন্ত জওহরলাল নেহরু রোড বন্ধ রাখেন। বন্ধ করে দেওয়া হয় পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুল, মেয়ো রোড এবং এস এন ব্যানার্জি রোডও। যার জেরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, লেনিন সরণি, আশুতোষ মুখার্জি রোড, শেক্সপিয়র সরণি, ক্যাথিড্রাল রোড, রেড রোড এবং এ জে সি বসু রোডের একাংশে দুপুর থেকেই যানবাহনের লম্বা লাইন পড়ে যায়। পুলিশকর্তারা জওহরলাল নেহরু রোডের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতেও দেননি বলে নিত্যযাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ।
দুপুরে ধর্মতলা চত্বর যখন অবরুদ্ধ, প্রায় একই সময়ে কলেজ স্কোয়ারে এআইডিএসও-র (এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন) সমর্থকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মিছিল করে মহাত্মা গাঁধী রোড ধরে তাঁরা কলেজ স্কোয়ারে আসেন। সেখান থেকে কলেজ স্ট্রিট, নির্মলচন্দ্র দে স্ট্রিট, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ করার কথা ছিল ওই সংগঠনের। পুলিশ অনুমতিও দিয়েছিল। কিন্তু ধর্মীয় সংগঠনের সভার জন্য ওই ছাত্র সংগঠনকে ওয়েলিংটন স্কোয়ারে আটকায় পুলিশ। মিছিল-সমাবেশের জেরে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, সূর্য সেন স্ট্রিট অচল হয়ে পড়ে। কলেজ স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত বিধান সরণির একাধিক জায়গায় যানজট হয়। মৌলালি, সিআইটি রোড, পার্ক সার্কাস মোড়েও তার প্রভাব পড়ে। সন্ধ্যার পরে ওই সব রাস্তা স্বাভাবিক হয়।
এ দিন মিছিল-সমাবেশের দরুণ বিপদে পড়েন পুজোর কেনাকাটা করতে আসা মানুষ। যেমন, টালিগঞ্জের রত্না দাস। তিতিবিরক্ত রত্নাদেবী বলেন, “পার্ক স্ট্রিট-জওহরলাল নেহরু রোডের মোড়ে আধ ঘণ্টারও বেশি ট্যাক্সিতে বসে থেকে বাধ্য হয়ে নেমে পড়ি। ভেবেছিলাম মেট্রোয় চলে যাব। সেখান গিয়েও দেখি, স্টেশনের শাটার ফেলে দিয়েছে পুলিশ!” মৌলালি থেকে হেঁটে কার্জন পার্কে গিয়ে হাওড়ার বাস ধরতে হয় সন্ধ্যা দাস, প্রতীক দত্তকে। প্রতীকবাবুর প্রশ্ন, “এমন ব্যস্ত এলাকায় রোজই মিটিং-মিছিলের অনুমতি দিতে হবে? আমাদের কথা কেন ভাবে না পুলিশ?”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.