সূর্যের বিকিরণ পশ্চিম ভারতের তুলনায় কম। তাই সৌর-শক্তি নির্ভর ব্যবসা টানার দৌড়ে এমনিতেই পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। সম্ভাবনা যেটুকু বা রয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা কাজে লাগাতেও ব্যর্থ তারা। সূর্যালোকে জল গরমের যন্ত্র তৈরির ব্যবসার এক শতাংশও টানতে না-পারা যার জলজ্যান্ত উদাহরণ। কিন্তু এ বার অন্তত এই ক্ষেত্রে চাকা ঘোরাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভা। এই প্রযুক্তির চাহিদা বাড়াতে বড় আবাসন ও বাণিজ্যিক ভবনে যন্ত্রটি (সোলার ওয়াটার হিটিং সিস্টেম) বসানো বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে তারা। এমনকী হাঁটছে বিন্ডিং-আইন সংশোধনের পথে।
সৌর-বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ শান্তিপদ গণচৌধুরির দাবি, শুধু কলকাতা, হাওড়া, দুর্গাপুর ও শিলিগুড়ি পুরসভা এই নিয়ম কার্যকর করলেই এক লাফে ৫ গুণ বেড়ে যাবে ব্যবসার অঙ্ক।
২০১১-’১২ আর্থিক বছরে দেশে এই ব্যবসার অঙ্ক ছিল প্রায় হাজার কোটি টাকা। যার সিংহভাগই গিয়েছে কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রে। সেখানে অনেক শহরেই বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনে এই পরিকাঠামো বাধ্যতামূলক। একই পথে হাঁটছে হরিয়ানাও। অথচ সেখানে এ রাজ্যে এই ব্যবসার পরিমাণ মাত্র ৮ কোটি। সারা দেশে যেখানে যন্ত্রটি ব্যবহার করে দিনে ৫ কোটি লিটার জল গরম হয়, সেখানে রাজ্যে হয় স্রেফ ৪ লক্ষ লিটার। কিন্তু গণচৌধুরির দাবি, রাজ্যের চার পুরসভা-এলাকায় নতুন নিয়ম কার্যকর হলেই তা পৌঁছে যাবে ২০ লক্ষ লিটারে। |
ইতিমধ্যেই বহুতল, হোটেল, ছাত্রাবাস ইত্যাদিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে আইন সংশোধন করেছে দুর্গাপুর পুরসভা। একই পথে হাঁটছে হাওড়াও। এই প্রযুক্তির বিস্তারের লক্ষ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যের সহযোগিতায় সম্প্রতি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল এন বি ইনস্টিটিউট ফর রুরাল টেকনোলজি ও উপদেষ্টা সংস্থা গ্রিনটেক নলেজ সলিউশন। সেখানে এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার এবং ডিজি (বিল্ডিং) অনিন্দ্য কার্ফোমা-ও।
গ্রিন বিল্ডিং-এর মতো এই পরিকাঠামো গড়ারও প্রাথমিক খরচ বেশি হওয়ায় আগ্রহীর সংখ্যা এখনও কম। এই প্রযুক্তিতে দিনে ১০০ লিটার জল গরমের যন্ত্র বসাতে গড়ে ১৮ হাজার টাকা লাগে। কতক্ষণ এবং কতটা গরম জল মিলবে, সংশয় রয়েছে তা নিয়েও। কিন্তু শান্তিপদবাবুর দাবি, এক বার বসিয়ে ফেলার পরে কিন্তু এই পদ্ধতিতেই জল গরমের খরচ কম। বৈদ্যুতিন গিজার ও গ্যাসে (সিলিন্ডারের দাম ৭৪০ টাকা ধরে) এক লিটার জল গরমের গড় খরচ যথাক্রমে ৪০ ও ৬০ পয়সা। সেখানে এই যন্ত্রে তা মাত্র ৮ পয়সা। সম্ভব দু’দিন পর্যন্ত গরম জল ট্যাঙ্কে ধরে রাখা।
বাঁচবে বিদ্যুৎও। সমীক্ষা অনুযায়ী, শুধু শীতকালে জল গরম করতেই কলকাতায় বাড়তি ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। সৌর প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে, এই চাহিদা কমবে। কম পুড়বে কয়লা। কমবে দূষণও। এগ্রিনটেক-এর ডিরেক্টর সমীর মইথেলের দাবি, এতে ১২ তলা পর্যন্ত উঁচু বাড়ির অর্ধেক ছাদ ব্যবহার করেই গরম জলের পুরো চাহিদা মেটানো যায়।
এ দিকে, কেন্দ্রীয় অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রকের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে ১০০ কিলোওয়াটের সৌর-বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়েছে হেরিটেজ গ্রুপ অফ ইনস্টিটিউশন। তাদের দাবি, পূর্বাঞ্চলে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। সম্প্রতি এর উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির পরিবেশ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী লুসিয়া পিউট্রিক। |