সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবন |
বকেয়া ভাড়া নিয়ে তরজা রাজ্য-জেলা পরিষদে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবনের বকেয়া ভাড়া নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে রাজ্য সরকার এবং সিপিএম পরিচালিত জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের মধ্যে। বাম সরকারের আমলে বকেয়া রাখা ওই টাকা জেলা পরিষদকে দেওয়া হবে না বলে শনিবার জানিয়ে দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। যদিও তৃণমূল সরকারের আমলে বকেয়া থাকা ভাড়া মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি দীপ্তি দত্ত বলেন, “আগের সরকার পরের সরকার বলে কোনও বিভাজন হয় না, আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকারকেই সব ভাড়া মেটাতে হবে।” সম্প্রতি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানায়, সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবন তথা জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর ভাড়া বাবদ প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। সেই বকেয়া টাকা রাজ্য সরকারকে দ্রুত পরিশোধ করার আর্জি চিঠিতে জানানো বয়েছে। জেলা পরিষদের হিসাব গত ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে ভাড়া বকেয়া রয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে বকেয়া টাকা দবি করাকে ‘সরকারি প্রক্রিয়া’ বলে জেলা পরিষদের তরফে দাবি করা হলেও এই ঘটনায় ‘রাজনীতির’ অভিযোগ তুলেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে বিব্রত করতেই সিপিএম পরিচালিত জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে বিষয়টি নিয়ে শোরগোল তৈরি করতে চাইছে বলে দাবি করে গৌতমবাবু বলেন, “সভাধিপতি দীপ্তি দত্ত কী এত দিন ঘুমোচ্ছিলেন! যখন সূর্যকাম্ত মিশ্র, আনিসুর রহমানরা পঞ্চায়েত মন্ত্রী ছিলেন তখন তো এক বারের জন্যও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে ভাড়া চায়নি। তার মানে যখন বাম সরকার রাজ্যে থাকবে তখন ভাড়া না দিলেও হবে আর সরকার পরিবর্তন হতেই ভাড়া চাইব। এমন হয় না। বাম সরকারের আমলের কোনও বকেয়া জেলা পরিষদকে দেওয়া হবে না।” মন্ত্রী বলেন, “তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে যত ভাড়া হয়েছে সেটি মিটিয়ে দেওয়া হবে। এই সরকার কারও টাকা বাকি রাখে না। তবে বাম আমলের ভাড়া সেই সরকারের থেকেই আদায় করুক জেলা পরিষদ।” মন্ত্রীকে পাল্টা কটাক্ষ করে জেলা পরিষদের সভাধিপতি দীপ্তি দেবী বলেন, “ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও সরকারের অবস্থান বা দায় যে বদলায় না সেটা মন্ত্রীর জানা আছে বলে ভেবেছিলাম। রাজ্য সরকার আইনত ভাড়া দিতে বাধ্য।” জলপাইগুড়িতে অস্থায়ী ভাবে সার্কিট বেঞ্চ চালু করতে টাউন স্টেশন লাগোয়া জেলা পরিষদের একটি তিন তলা ডাকবাংলোকে পছন্দ করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রতিনিধি দল। সেই মত ২০০৪ সালে জেলা পরিষদের থেকে ডাকবাংলোটি ভাড়া নেয় রাজ্য সরকার। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ডাকবাংলোর বিভিন্ন ঘর ভেঙে শুরু হয় অস্থায়ী ভবন তৈরির কাজ। ডাকবাংলোর ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ৯১ হাজার টাকা ভাড়া স্থির করে জেলা পরিষদ। প্রথমে দু বছরের চুক্তিতে ভাড়া নিলেও, সম্প্রতি চুক্তির সীমা ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ২০০৯ এপ্রিল থেকে ভাড়া বাড়িয়ে প্রতি মাসে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে এই ভাড়া রাজ্য সরকারই মেটাচ্ছে. তার পর থেকেই ভাড়া বকেয়া রয়েছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। বাম আমলেও ভাড়া বকেয়া থাকার প্রসঙ্গে সভাধিপতি দীপ্তি দেবী জানান, “বাম সরকার তো অনেক বছরের ভাড়া দিয়েইছে। কিন্তু নতুন সরকার আসার পরে গত দেড় বছরে এক টাকাও ভাড়া দেওয়া হয়নি। সে কারণেই সরকারি নিয়ম মেনে ভাড়া চাওয়া হয়েছে।” যদিও তৃণমূলের তরফে মনে করা হচ্ছে জলপাইগুড়িতে দ্রুত অস্থায়ী ভাবে সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু করা নিয়ে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হওয়াতে সিপিএম রাজনৈতিক ভাবে কিছু বলতে না পেরে চিঠি দিয়ে বিব্রত করার কৌশল নিয়েছে। |