দুষ্কৃতীদের আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে আসানসোলের উত্তর থানার অন্তর্গত অন্যতম অভিজাত অঞ্চল কন্যাপুর স্যাটালাইট টাউনশিপের বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, গত তিন মাসে এলাকায় একাধিক চুরি ও চুরির চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশি টহলদারি থাকলেও বন্ধ হচ্ছে না কমছে না দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা। বাড়ি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ারও পরিকল্পনা করছেন কেউ কেউ। এই অবস্থায় এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে কন্যাপুর স্যাটেলাইট টাউনশিপের নাগরিক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, পুলিশের কাছে পুরো বিষয়টি জানালেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। তরুণবাবু বলেন, “আমরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। তাতেও দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পারা যাচ্ছে না। রাতে ঘুমোতে পারছি না।” পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশ কুমার বলেন, “আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।” তিনি জানান, স্থানীয় থানার অফিসারদের বেশ কয়েকটি নির্দেশাবলীও দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ১৫ বছর আগে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) তত্ত্বাবধানে এই স্যাটেলাইট টাউনশিপটি গড়ে ওঠে। আসানসোল পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত এই টাউনশিপটিতে বসবাসের জন্য জমির ছোট ছোট প্লট করে বাসিন্দাদের ৯৯৯ বছরের লিজে দেওয়া হয়। বর্তমানে ৩৩০টি পরিবারের বসতি এখানে। মূলত, শিল্পাঞ্চলের দূষণ থেকে রেহাই পেতেই অপেক্ষাকৃত নির্জন টাউনশিপটিতে উঠে আসেন বাসিন্দারা। কিন্তু সেই নির্জন পরিবেশই ক্রমশ আতঙ্কের হয়ে উঠেছে তাঁদের কাছে। বাড়ি ফাঁকা পেলেই দুষ্কৃতীরা চড়াও হচ্ছে বলে অভিযোগ। |
ভর দুপুরেও ঘরের তালা ভেঙে লুঠপাট চালাচ্ছে এরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত তিন মাসে এরকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সঠিক সময়ে জানতে পারায় কয়েকটি চুরির চেষ্টা আটকাতে পেরেছেন বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের ২৫ তারিখ এএফ প্লটের গোপাল সেনের বাড়িতে তালা ভেঙে লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। তার আগে ৩ সেপ্টেম্বর ওই প্লটেরই বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা শিখা রায়ের বাড়িতে দিনে দুপুরে ডাকাতি হয়। ২৫ জুলাই ডিবি ব্লকের একটি বাড়িতে চুরির চেষ্টা হয়। ২৬ জুলাই ওই ব্লকের ১১ এবং ১৩ নম্বর বাড়িতে চুরির চেষ্টা হলে দুষ্কৃতীদের ধরে ফেলেন এলাকার বাসিন্দারা। পরপর এই ঘটনায় স্বভাবতই আতঙ্কিত বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, সন্ধ্যা নামলেই টাউনশিপের বিভিন্ন জায়গায় বহিরাগতের আনাগোনা বাড়ছে। সাট্টা, জুয়া, মদের আসর বসছে। স্থানীয় বাসিন্দা, একটি রাস্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী হিমাংশু রঞ্জন ঘোষ বলেন, “অবসরের পর শান্তিতে থাকব বলে এখানে বাড়ি বানিয়েছিলাম। কিন্তু আজকাল থাকতে ভয় করছে।” অপর এক বাসিন্দা শুক্লা চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “রাত নামলেই ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকি। ভাবছি বাড়ি বিক্রি করে নিরাপদ জায়গায় চলে যাব।” নিজেদের নিরাপত্তা বাড়াতে এলাকার যুবকেরা রাতপাহারার ব্যবস্থা করেছেন। কন্যাপুর স্যাটালাইট টাউনশিপের নাগরিক সমিতির সহ সম্পাদক কিরণ ভট্টাচার্যের অবশ্য বক্তব্য, “রাতে পাহারা দিলেও আতঙ্কে থাকি। দুষ্কৃতীরা অস্ত্র নিয়ে এলাকায় ঢুকছে। যে কোনও সময়ে খুন করতে পারে ওরা।” কিরণবাবু জানান, দুষ্কৃতীরা প্রতি রাতে কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে এলাকায় চুরি করতে আসছে। তৎপরতায় এদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছেন না রাতপাহারা দেওয়া যুবকেরা। অন্য দিকে, এলাকার কংগ্রেস নেতা সুব্রত বিশ্বাসের অভিযোগ, অল্প সংখ্যক পুলিশ-কর্মী দিয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, “সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত মহিলারা। সামনে পুজো। বাড়ি ফাঁকা রেখে বেরোতেও পারবেন না বাসিন্দারা।” আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, বিষয়গুলির তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে। |