বারো ক্লাসের নাতনিকে জীবনানন্দ দাস পড়াতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজির শিক্ষক। তখনই ঠিক করেন, এ বার বাংলা সাহিত্যটাও একটু রপ্ত করতে হবে। সেই শুরু। তারই অঙ্গ হিসেবে রবিবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগে বাংলায় এমএ পার্ট-এর পঞ্চম পত্রের পরীক্ষা দিলেন ৮২ বছরের অজিতকুমার চন্দ।
অজিতবাবুর বাড়ি ব্যান্ডেলে। ১৯৫৪ সালে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু। ১৯৬২-এ ব্যান্ডেল বিদ্যামন্দির হাইস্কুলে যোগ দেন। এই সময়ে ইংরেজিতে এমএ পাশ করেন। ১৯৮৬-এ মগরার আখনা ইউনিয়ন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হন। ১৯৯৫ সালে সেখান থেকেই অবসর।
বর্ধমানের কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ দিন যখন তিনি পরীক্ষা দিতে পৌঁছন, প্রধান শিক্ষক সৌমেন কোনার ও পরিচালন সমিতির সম্পাদক মুমতাজ আনসারি নিয়ম ভেঙে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকা অভিভাবক ঠাউরেছিলেন তাঁকে। ভুল ভাঙলে তাঁরাই নির্দিষ্ট আসনে পৌঁছে দেন। |
অজিতবাবু তাঁদের অনুরোধ করেন, “আমাকে একটু জানলার পাশে বসতে দেবেন। চোখে তো কম দেখি।” অনুরোধ মঞ্জুর হয়। পরীক্ষার্থীকে মাঝেমধ্যে চা-জলও দেওয়া হয়। প্রায় হাঁটুর বয়সীদের পাশে বসে পরীক্ষা শেষ হওয়ার মিনিট পনেরো আগেও তাঁকে দ্রুত গতিতে লিখতে দেখা গিয়েছে।
তাঁর সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার পরে হুগলির বৈঁচিগ্রামের যুবক প্রীতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই বয়সেও ওঁর শিক্ষার প্রতি টান দেখে আমরা অনুপ্রাণিত।” স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক শেখ হারাধন ৮২ বছরের বৃদ্ধের পরীক্ষা দেওয়ার খবর পেয়ে তাঁকে দেখার জন্য হাজির হন। তিনি বলেন, “ওঁকে প্রণাম করতে এসেছিলাম।” অজিতবাবু অবশ্য বলেন, “এত হইচই দেখে লজ্জা লাগছে। জানার তো শেষ নেই। শ্রীরামকৃষ্ণই তো এ কথা বলে গিয়েছেন।” |