সন্তান বয়ঃসন্ধিতে পড়েছে। কিছু দিন পর থেকেই শুরু হল কথায় কথায় বাবা-মায়ের সঙ্গে খটাখটি। এই হাসিখুশি তো এই গম্ভীর। আবার হঠাৎই ভয় পাওয়া। ‘জেনারেশন গ্যাপ’? নাকি মানসিক কোনও সমস্যা? অনেক অভিভাবক তো ঝুঁকি না নিয়ে পরামর্শ নেন কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চলে কাউন্সেলিং। বয়ঃসন্ধির এই সমস্যা খুবই পরিচিত।
কিন্তু ঠিক কী কারণে এই সমস্যা?
বহু দিন ধরেই এই নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন আমেরিকার ওয়েইল কর্নেল মেডিক্যাল কলেজের গবেষকরা। সম্প্রতি তাঁরা জানিয়েছেন, বয়ঃসন্ধির সময়ে কোনও কিশোর বা কিশোরী ভয়াবহ ঘটনার সম্মুখীন হলে, তার স্মৃতি কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না। কোনও বিষয় তার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে মনে করলে সেই ঘটনা নিয়ে সব সময় চিন্তা করে যায় তারা। আর এই নিয়ে ওই কিশোর বা কিশোরীর মনে খুবই চাপ পড়ে। যার প্রভাব দেখা যায় তাদের আচরণে।
কিন্তু একই ঘটনার ক্ষেত্রে কোনও শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কেরা তুলনায় অনেক স্বাভাবিক আচরণ করে বা পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়। তাঁদের এই গবেষণা ‘প্রসিডিং অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
এই নিয়ে গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বয়সের কয়েক জনকে বেছে নিয়েছিলেন। প্রথমে বয়স অনুযায়ী তাদের শিশু, বয়ঃসন্ধি এবং প্রাপ্তবয়স্ক এই তিনটি দলে ভাগ করা হয়। এদের প্রত্যেককে একটা অন্ধকার ঘরে কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কানে হেডফোন। গায়ের সঙ্গে লাগানো ছিল একটা বিশেষ সেন্সর। সেই সেন্সরের কাজ ছিল, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কতটা ঘেমেছে তা পরীক্ষা করে দেখা।
এর পর স্ক্রিনে পর পর নীল আর হলুদ রঙের কয়েকটা চৌকো বাক্স দেখানো হয়। নীল রঙের একটা বাক্সর ছবির সঙ্গে ভয় পাওয়ানো একটা শব্দ বেশ কিছু ক্ষণ শোনানো হয়। এই সময়ে সেন্সরের সাহায্যে ওই ব্যক্তি কতটা ঘেমেছে তা মাপা হয়। পরের দিন আবার তাদের ওই একই ছবি দেখানো হয়। কিন্তু এ বার কোনও শব্দ শোনানো হয়নি।
গবেষকরা দাবি করেছেন, দ্বিতীয় বার শব্দ শোনা না গেলেও নীল বাক্স স্ক্রিনে ফুটে ওঠা মাত্র বয়ঃসন্ধিতে রয়েছেন এমন কিশোর কিশোরীরা অনেক বেশি ঘামছে। তাদের শারীরিক আচার-আচরণে ফুটে উঠছিল অস্বস্তির চিহ্ন। প্রথম কয়েক বার বয়স্ক এবং শিশুরা অনেকটা একই রকম আচরণ করল। কিন্তু কিছু ক্ষণ পর যখন নীল বাক্সের সঙ্গে কোনও শব্দ শোনা গেল না, বয়স্ক ও শিশুদের আচরণে স্বস্তির চিহ্ন ফুটে উঠল। এমনকী প্রথম বারের তুলনায় তারা অনেক কম ঘামলেন।
গবেষক দলের প্রধান সিওভান এস প্যাটওয়েল বলেন, “এত দিন ধারণা করা হলেও এই প্রথম প্রমাণ করা গেল যে, বয়ঃসন্ধিকালে মানুষের ভয় পাওয়ার পরিমাণ শিশু বা প্রাপ্ত বয়স্কদের থেকে অনেক বেড়ে যায়। তুলনায় কমে যায় পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা।”
সিওভানের মতে, এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়ে মানুষের যে অভিজ্ঞতা হয়, তাকেই কাজে লাগিয়ে পরবর্তীকালে পরিবেশের মানিয়ে নেন বয়স্করা। তবে যারা এখন বয়ঃসন্ধিতে, তারা এই গবেষণা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার আগে দু’এক বার ভেবে নিন। কারণ, শুধু মানুষ নয়, ব্যাঙের উপর গবেষণা চালিয়ে নাকি একই ফলাফল দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। |