পয়লা অক্টোবরে যখন দিল্লিতে যন্তরমন্তরে ধর্না মঞ্চে বক্তৃতা দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন রাজ্যেও পাল্লা দিয়ে টক্কর দেবে দুই সদ্য প্রাক্তন শরিক। শনিবার দিনভর তারই প্রস্তুতি চলল দুই শিবিরে। এখানেই শেষ নয়, পুজোর আগেই বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সমর্থনে জেলায় জেলায় প্রচার কর্মসূচি নিয়েছে কংগ্রেস। আর বিরোধিতায় দলের ছাত্র-যুবদের দিয়ে জেলায় জেলায় পাল্টা প্রচার চালাবে তৃণমূল।
সব দেখে রাজনীতির কারবারিদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখেই প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছে দুই দল। কারণ, লগ্নির প্রথম পরীক্ষা তো পঞ্চায়েত ভোটেই।
সোমবার, পয়লা অক্টোবর দুপুরে দিল্লির ধর্নামঞ্চে মমতা যে বক্তৃতা দেবেন, তা রাজ্য জুড়ে জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানোর ব্যবস্থা করছে তৃণমূল। বস্তুত, এই ভাবেই তারা পঞ্চায়েতের প্রচার শুরু করবে বলে জানিয়েছেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। এ দিন তৃণমূল ভবনে দলের যুব ও ছাত্রদের নিয়ে আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করতে বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। |
মহাকরণ থেকে দিল্লির পথে মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি। |
শুভেন্দু বলেন, “কংগ্রেসকে এখন দুর্নীতিগ্রস্ত দল হিসেবে দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে। কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজন থেকে শুরু করে কয়লা কেলেঙ্কারিতে কংগ্রেস অভিযুক্ত।” এই পরিস্থিতিতে ‘কংগ্রেস হটাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগান তুলে প্রচারে নামছেন শুভেন্দুরা। পুজোর আগে ও পরে তাঁরা প্রচারের কর্মসূচি এ দিন তৈরি করেছেন। মঙ্গলবার মহাত্মা গাঁধীর জন্মদিনে ব্লকে ব্লকে সভা করে বিদেশি পুঁজির বিনিয়োগের বিরোধিতা করে সভা করবে তৃণমূল।
এ দিকে শনিবার থেকেই এফডিআইয়ের সমর্থনে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার শুরু করে দিল প্রদেশ কংগ্রেস। এ দিন মৌলালি যুবকেন্দ্রে আর্থিক সংস্কার এবং এফডিআইয়ের সমর্থনে আলোচনাসভার আয়োজন করে তারা। সেখানে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্য সরকার এফডিআই এবং কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের রাজনীতি করছে। এর মোকাবিলায় জেলায় জেলায় গ্রামগঞ্জের মানুষকে এফডিআইয়ের সুফল আপনাদের বোঝাতে হবে। কংগ্রেস নেতৃত্বও জেলায় যাবেন আপনাদের বোঝাতে।” অর্থনীতির শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞরাও জেলায় গিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের বোঝাবেন। আগামী সপ্তাহ থেকেই জেলায় জেলায় এই প্রচারকে পৌঁছে দিতে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রদেশ নেতৃত্ব।
সোমবার তৃণমূলের পাল্টা প্রচারাভিযানের মোকাবিলায় কী করবে কংগ্রেস? দল জানিয়েছে, ওই দিন দুপুরেই এফডিআইয়ের সমর্থনে কলকাতায় মিছিল করা হবে। মিছিল হবে ময়দানে ইন্দিরা গাঁধীর মূর্তির সামনে থেকে মমতার খাসতালুক হাজরা পার্ক পর্যন্ত। মিছিলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মারও থাকার কথা।
এ দিন এফডিআই নিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের বোঝানোর মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় অর্থনীতির শিক্ষক সুমন মুখোপাধ্যায়কে। তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের প্রাক্তন ছাত্র। সুমনবাবুর বক্তব্য, “দেশি বিনিয়োগকারীরা এই রাজ্যে ব্যবসা করছেন। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ এলে ক্ষতির আশঙ্কা অযৌক্তিক। বরং এফডিআই এলে রাজ্যের আর্থিক বিকাশ হবে। মানুষের আয় বাড়বে।”
সুমনবাবুর যুক্তি, “চিনে এফডিআই সবচেয়ে বেশি। সেখানেও কিন্তু স্পষ্ট ভাবে কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া রয়েছে। সে ভাবেই এখানেও শর্ত বেঁধে দেওয়া হোক।” উদাহরণ দিয়ে তিনি বোঝান, অর্থাভাবে সরকার চাষিদের কাছ থেকে সব ফসল কিনতে পারে না। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ এলে তাদের প্রযুক্তিতে সব ফসল সরাসরি কিনতে পারবে। চাষিদের সুরাহাই হবে। প্রদীপবাবুর সংযোজন, “এখন ৩০% ফসল চাষি বিক্রি করতে পারে না। এফডিআই এলে তা হবে না।” |