কাঞ্চনজঙ্ঘায় আজ ‘গোয়ার বার্সেলোনা’ বনাম ‘বাংলার ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড’
ফাইনালে দুই কোচই নিজের দলকে পিছিয়ে রাখছেন
র্সেন ওয়েঙ্গারের সঙ্গে অ্যালেক্স ফার্গুসনের লড়াই আজ! নাকি ‘গোয়ার বার্সেলোনা’-র বিরুদ্ধে বাংলার ‘ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড’-এর!
কাঞ্চনজঙ্ঘায় রবিবাসরীয় সন্ধেয় ফেড কাপ ফাইনালের আগে দু’টো ব্যাপারই হাজির। অন্য মোড়কে।
পাঁচবারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন ডেম্পো কোচ আর্মান্দো কোলাসোর পছন্দ, ওয়েঙ্গারের ফুটবল-দর্শন। তারকা নির্ভর ফুটবল নয়, টিম গেম। আবার বার্সেলোনার মতো পাসের ফুলঝুরি ছড়াতে ছড়াতে বিপক্ষের গলা টিপে ধরা। গত কালই সেমিফাইনালে করিম বেঞ্চারিফার সালগাওকরকে যে স্ট্র্যাটেজিতে উড়িয়ে দিয়েছেন মহেশ-ক্লাইম্যাক্স-কোকোরা।
টানা তিনবার ফেড কাপের ফাইনালে ওঠার রেকর্ড করে ফেলা ট্রেভর মর্গ্যানের আবার পছন্দ ফার্গুসনের মতো টিমের দীর্ঘ স্থায়িত্ব। খুব বিপদে না পড়লে একই টিম এবং স্ট্র্যাটেজি রেখে যাওয়া। অপেক্ষা করতে করতে পাল্টা আক্রমণে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। ম্যান ইউ যেটা করে। সুভাষ ভৌমিকের চার্চিল ব্রাদার্সকে যে ভাবে বধ করলেন চিডি-পেন-লালরামডিকারা।
লক্ষ্য স্থির চিডির।
এ দেশে আসা অন্যতম সেরা বিদেশি কোচ মর্গ্যান এবং এ দেশের ক্লাব ফুটবলের সফলতম কোচ আর্মান্দোর ফুটবল দর্শনের ফারাক থাকতে পারে। কিন্তু সাদৃশ্যও কম নয়। দুই কোচই ব্যর্থতায় ফুটবলারদের আড়াল করেন। জিততেই হবে বলে টিমকে অযথা চাপে রাখেন না। বরং খেলাটাকে উপভোগ করতে বলেন। কোনও ফুটবলার চোট বা কার্ড সমস্যায় বাইরে চলে গেলে হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসেন না। নতুন ছেলেদের নিয়ে যুদ্ধে নামেন। টিমে সমস্যা তৈরি হলে সেটাকে উস্কে না দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেন। দু’জনের আরও একটা বড় গুণ, কেউ কারও বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বিবৃতি দেন না। নিট ফল, ধুন্ধুমার যুদ্ধে নামার আগের দিনও দু’পক্ষ থেকে কোনও গোলাগুলি ছোড়ার খবর নেই।
যেটুকু আছে তা শ্রদ্ধার মোড়কে। যেমন, শনিবার সকালে স্থানীয় বডার্র সিকিওরিটি মাঠে অনুশীলনের আগে ও পরে লাল-হলুদের কোচ বলে দিয়েছেন, “কাল আমরা আন্ডারডগ। চার্চিলের বিরুদ্ধে নামার আগে যেমন ছিলাম। ডেম্পো দীর্ঘ দিন এক টিম নিয়ে খেলছে। প্রচুর অভিজ্ঞ ফুটবলার আছে। মাঝমাঠটা খুব ভাল। যা চার্চিলেরও ছিল না।” যা শুনে হেসেছেন আর্মান্দো। “ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকে ভরা শহরে খেলা। ওদের দর্শকেই স্টেডিয়াম ভর্তি থাকবে। সাধারণত সারা বিশ্বে সব জায়গায় রেফারিরা স্থানীয় দলকে সামান্য হলেও সাহায্য করে। ব্রাজিল, আর্জেন্তিনাও সেই সাহায্য পায়। ইস্টবেঙ্গলও হয়তো পাবে। এত কিছু পরেও ওরা নিজেদের আন্ডারডগ বলছে কেন গোয়ায় খেলা হলে তাও মানতাম। আন্ডারডগ তো আমরাই।”
দু’তরফের কথা শুনলেই বোঝা যায়, দুই কোচই নিজের ড্রেসিংরুমে কোনও চাপ ঢুকতে দিতে চাইছেন না। ইস্টবেঙ্গল-কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ ম্যাচকে ‘প্রহসন’ বলে মন্তব্য করার জন্য গ্যালারিতে লাল-হলুদ সমর্থকরা আর্মান্দোর উদ্যেশ্যে যতই কটুক্তি করুন, তাতে বিরক্ত হলেও প্রাক্তন জাতীয় কোচ সংযত। দলের ওপরও সেই শান্ত বাতাবরণ জারি রাখতে চান ডেম্পো কোচ। ব্রিটিশ মর্গ্যানও কিন্তু সেটাই চাইছেন। রক্ষণে দলের স্তম্ভ ওপারা নেই। নেই ওপারার সফল সঙ্গী গুরবিন্দরও। দু’জনেই কার্ড-সমস্যায় আটকে। রাজু গায়কোয়াড়-অর্ণব মণ্ডল জুটি মরসুমে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবেন। কর্তা থেকে সমর্থকসবাই চিন্তিত। মর্গ্যান কিন্তু বলছেন, “সব ম্যাচ কালীঘাট ম্যাচ হবে না। কালকের ফাইনালের নব্বই মিনিটও ওদের জীবনের শেষ নয়। ওদের ওপর কোনও চাপ নেই। আমারও নেই।”
মর্গ্যান শিলিগুড়ির তীব্র গরমের মধ্যে ঘণ্টাখানেক অনুশীলন করালেও, আর্মান্দো পুরো টিমকে আজ বিশ্রাম দিয়েছিলেন। দু’তরফই সংযত হলেও ইস্টবেঙ্গল এবং ডেম্পো শিবিরে সারাদিন চক্কর দিয়ে মনে হল, দুই ধুরন্ধর কোচের আরও একটা চমকপ্রদ স্ট্র্যাটেজির লড়াই হতে যাচ্ছে ফাইনালে। যেখানে পরতে পরতে থাকবে নানা অঙ্ক। ট্যাকটিক্সের ঝনঝনানি। মুখে একে অপরকে এগিয়ে রাখলেও মানছেন, ফাইনালের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে মাঝমাঠের ব্যাটন কাদের হাতে থাকবে তার ওপর। দুই কোচ মাঝমাঠে তাঁদের প্রথম চার অস্ত্রও বেছে ফেলেছেন। মর্গ্যানের অস্ত্রহরমনজিৎ খাবরা, মেহতাব, পেন। কোনও অস্ত্র ভোতা হয়ে গেলে তৈরি রাখা হচ্ছে সঞ্জু আর চার্চিল ম্যাচের নায়ক ডিকাকে। আর্মান্দোর পাল্টা অস্ত্রক্লাইম্যাক্স লরেন্স, ক্লিফোর্ড মিরান্ডা, অ্য্যান্টনি পেরিরা আর পিটার কার্ভালহো। রিজার্ভ বেঞ্চে রাখা হচ্ছে সালগাওকর ম্যাচের নায়ক রোমিও ফার্নান্ডেজ আর সুয়েকাকে। ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়া জাপানি মিডিও-কাম-স্ট্রাইকারকে রাতে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে এনেছে ডেম্পো। লক্ষ্য করে দেখুন, দু’দলের রিজার্ভ বেঞ্চেই দুই দুরন্ত তরুণ ডিকা আর রোমিও-কে রেখে দেওয়া হচ্ছে।
ফাইনালের অস্ত্রে-শান। কোচ ট্রেভর মর্গ্যানের সঙ্গে চিডি ও পেন।
বাকি কী পরে থাকল? শনিবার দুপুরে হোটেল মনার্চ আঁচল-এ খেতে বসে ডেম্পোর প্রথম একাদশের একমাত্র বিদেশি কোকো সাকিবো বলছিলেন, “ওপারা কিন্তু খুব টাফ ফুটবল খেলে। ওর না থাকাটা আমাদের সুবিধা করে দেবে।’’ কোকোর সঙ্গী স্ট্রাইকার জোয়াকিম আব্রাঞ্চেজ পাশে বসে বলে দেন, “রাজু আর অর্ণবও অনেক দিন খেলছে। ভুলে যেও না।” অন্য দিকে আবার মেহতাবে মন্তব্য, “ওপারা না থাকাটা আমাদের সত্যিই ক্ষতি। কিন্তু সবাই মিলে সেই অভাব পুষিয়ে দেব।” অনুশীলনে দেখা গেল নেহরু কাপ জয়ী ভারতীয় দলের ডিফেন্ডার রাজুকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে। ডিফেন্স তিন গোল হজম করায় কালীঘাট ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে ফিরে কেঁদে ফেলেছিলেন। শনিবার কিন্তু বললেন, “ফাইনালে একটাও গোল না খাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামছি।” তাঁর সঙ্গী অর্ণবও বললেন, “সে দিনেরটা দুর্ঘটনা ছিল।”
দুই কোচই ম্যাচটা নব্বই মিনিটেই জিততে চাইছেন। মর্গ্যান বলছেন, “এএফসি কাপটা পিছনের দরজা দিয়ে খেলতে চাই না। ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সম্মানের সঙ্গে যেতে চাই।” আর্মান্দোর আবার মন্তব্য, “নির্ধারিত সময়েই ম্যাচটা শেষ করে দেব। বহু দিন ফেড কাপ জিতিনি। এ বার আর খালি হাতে ফিরতে চাই না।” কিন্তু সত্যিই কে জিতবে ম্যাচটা? নক আউট ম্যাচ মুহূর্তে-মুহূর্তে রং বদলায়। তবে তথ্য জানিয়ে দিচ্ছে, ট্রেভর মর্গ্যান ইস্টবেঙ্গলে আসার পর ডেম্পো লাল-হলুদকে এক বারও হারাতে পারেনি শেষ ২৭ মাসে। ‘ম্যাচ-লাক’ ধরলে তাই ‘অ্যাডভান্টেজ ইস্টবেঙ্গল’!

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.