|
|
|
|
|
|
|
সিনেমা সমালোচনা... |
|
মা-ছেলের সম্পর্কের উদযাপন |
পরিচালকের সৎ প্রয়াস। রূপার গান এ ছবির অনবদ্য পাওনা। লিখছেন বাণী বসু |
মা ও ছেলে। এই চিরন্তন বিষয়বস্তুর আবেদনের ওপর ভরসা করে আজকাল আর কোনও গল্প তৈরি করা যাচ্ছে না। দিনকাল এতটাই বদলে গেছে যে মায়েরা নিজেরাই ছেলেদের ছেড়ে দেবার প্রয়োজন বুঝেছেন। উপরন্তু আজকের যৌবন কোনও অতীতের মোহস্পর্শ অনুভব করতে অপারগ হয়েই তৈরি হচ্ছে। ওসব নিছক সেন্টিমেন্টালিটি! ‘অবশেষে’ ছবির মূল চরিত্রে সৌম্যর ভূমিকায় অঙ্কুর খন্নার শক্ত চোয়াল, ঈষৎ রূঢ় চলনে-বলনে এই আজকালকার ছেলেটিকে বেশ চেনা যায়। লস এঞ্জেলেস থেকে সৌম্যর বাবা ছ’বছর আগে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তি বিক্রিটিক্রি করে আসতে ছেলেকে পাঠিয়েছে। সৌম্যর মায়ের ওপর কোনও টান নেই। তাঁকে সে চেনেই না। সৌম্যর ছোটবেলায় বাবা যখন আরও উন্নতির সঙ্কল্পে তাকে নিয়ে স্টেটস যাত্রা করে তখন তার মা শুচিস্মিতা মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে চায় না। সেটা ‘হার চয়েস’। কিন্তু বাবা ছেলের যথেষ্ট ‘কেয়ার’ নিয়েছে।
শুচিস্মিতা (রূপা গঙ্গোপাধ্যায়) মেয়েটি ভাবুক। ছবি আঁকে, গান করে, নিজেদের পৈতৃক বাড়ি কিছুতেই প্রোমোটারের হাতে তুলে দেয় না। সে সম্পর্কবিলাসী। তাঁর অ্যাডভোকেট বন্ধু (সুমন মুখোপাধ্যায়) ও তাঁর পরিবার, ছোটবেলার বন্ধু পিয়ালি (মানসী সিংহ) ও তাঁর স্বামী, প্রতিবেশী ডাক্তার মেয়ে নন্দিনী বা মণি (রাইমা সেন)এঁদের সবার সঙ্গেই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তাঁর। তাঁরাও সবাই স্পর্শকাতর শুচিস্মিতার সম্পর্কে।
সৌম্যর মনে মাকে নিয়ে কোনও আবেগ না থাকলেও কিছু চাপা প্রশ্ন আছে। যেমন মা তাঁকে কখনও চিঠি লেখেনি, কেন? যার উত্তরে নন্দিনী বলে চিঠিগুলো ঠিকই দেওয়া হয়েছিল। হয়তো সে পায়নি। অনুপস্থিত বাবা পার্থ রায়ের দিকেই সন্দেহটা যায়। পার্থ যখন দেশ ছাড়ে, তার অসহায় বৃদ্ধ বাবা তখন জীবিত। তার সমাধান করতে সে বাবাকে, “বেস্ট” বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিতে চেয়েছিল। এ কী রকম মানুষ? এতগুলো বছরে কোনও চিঠিপত্র না, একবারও দেশে ফেরা নয়। এ সব কেন? ছেলের সঙ্গে মায়ের বন্ধন আলগা রাখতে?
এই ধরনের খোঁজার ছবির একটা সাসপেন্স-থ্রিলার গোছের গড়ন থাকতে বাধ্য। ‘মেমরিজ ইন মার্চ’ ছবিতে মা-ই ছেলের মৃতু্যুর খবর পেয়ে কলকাতায় ছুটে এসেছিলেন। তাঁরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবু ছেলের মধ্যে একটি অন্য ছেলের অস্তিত্বের কথা তিনি জানতেন না। সেই আবিষ্কারই ছবিটিকে ক্লাইম্যাক্স দিয়েছিল।
এ ছবির শুরু হয় খোঁজ দিয়ে। মধুবন্তীর খোঁজে সিকিমের নামচিতে গেছে শুচিস্মিতা। মধুবন্তী মারা গেছে। কিন্তু তার মেয়ে মেঘলা (সুদীপ্তা চক্রবর্তী) একটা প্রচণ্ড শক খাওয়ার মতো খবর দেয় তাকে। আমরা ভাল করে কিছু বোঝবার আগেই অ্যালকোহলে সিক্ত শুচিস্মিতা ট্রাকের ধাক্কায় মারা যায়। সেই শকের কারণ তখন উহ্য রেখেছিলেন পরিচালক। সৌম্যর মাকে বোঝার শেষ পর্যায়ে প্রকাশিত হয়ে সেটা। মধুবন্তীর মেয়ে মেঘলার বাবার নাম পার্থ রায়। |
|
অবশেষে
রূপা, রাইমা, অঙ্কুর খন্না |
সে বড় হয়েছে পিতৃপরিচয়হীন। কে জানত, মাকে আবিষ্কার করতে গিয়ে এ ভাবে বাবাকেই আবিষ্কার করে বসবে সৌম্য!
সেই পার্থ রায় যার কবিতা আবৃত্তি শুনে শুচিস্মিতার প্রেমে পড়া, যে পার্থ রায় ছেলের কাছ থেকে মায়ের চিঠি লুকিয়ে রাখে, স্ত্রীর দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরও দেশে আসে না, ছ বছর পরে মায়ের সম্পত্তির বিলি ব্যবস্থা করতে ছেলেকে পাঠায়, সেই পার্থ রায় ‘অবশেষে’ মধুবন্তী নামে একটি মেয়ের গর্ভে নিজের বীজ বপন করে এসেছিল! এই আয়রনিটাই প্লটের প্রাণ। তবে আরেকটু স্পষ্ট হলে ভাল হত।
ছবিটা এক অর্থে কলকাতা উদ্যাপন। আর এক অর্থে শুচিস্মিতার উদ্যাপন এবং তৃতীয়ার্থে নিজের শিকড় ছিঁড়ে বিদেশ চলে যাওয়ার বিরুদ্ধে একটা মেসেজ।
অভিনেতারা সকলেই অত্যন্ত অভিজ্ঞ, এঁরা যে যথাযথ অভিনয় করবেন বলাই বাহুল্য। অঙ্কুর খন্নাই নবাগত। ভাল করেছেন। তবে রাতের ট্রামলাইনে শুয়ে পড়ে কলকাতার হৃদয়ের শব্দ শোনাটা বাড়াবাড়ি। কিন্তু সেটা অঙ্কুরের দোষ নয়। সিনেমাটোগ্রাফি এত ভাল যে ছবি থেকে চোখ সরে না। একটা গোধূলি, কয়েকটা রাত চমৎকার। তা সত্ত্বেও কী যেন নেই। ধনে, জিরে, হলুদ, লঙ্কা, গরম মশলা মায় জাফরান পর্যন্ত সমৃদ্ধ, তবে কি নুনটাই কম পড়ে গেল? কী নেই? ফোকাস? প্যাশান? সবাই দুঃখ ভুলতে এত মদ্যপানই বা করে কেন? এটা বড্ড ক্লিশে!
আরেকটা কথা বলি রূপাকে সব সময় একটু চাপা ডিপ্রেসড চরিত্রে অভিনয় করতে হবে কেন? কেন দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে কথা বলতে হবে? কোনও বড় অভিনেত্রীকে এ ভাবে স্টিরিওটাইপ করে ফেলাটা একটা অপরাধ। তবে এ ছবির আর একটা সম্পদ রূপার গান। সঙ্গীত পরিচালককে ধন্যবাদ।
তরুণী পরিচালক অদিতি রায় যথেষ্ট ভাল কাজ করেছেন। নীলের চিত্রনাট্যটিও মন্দ না। |
|
|
|
|
|