সংস্কৃতি এখানে-সেখানে

নটনিক্কনের কর্মশালা
ভরতনাট্যম বা ওড়িশি নৃত্যের সঙ্গে মণিপুরী নৃত্যের মূলগত পাথর্ক্য নিহিত আছে নৃত্যের চলনে। ভরতনাট্যমের চলন জ্যামিতিক, তীক্ষ্ন ও স্পষ্ট। মণিপুরীর চলনে আছে প্লবতা, নমনীয়তা, কোমলতা---বলছিলেন মণিপুরী ও ভরতনাট্যম-উভয় নৃত্যে পারদর্শী সুচরিতা শর্মা। কলকাতা থেকে জলপাইগুড়ি নটনিক্কন-এর ২০ থেকে ২৩ শে সেপ্টেম্বর আয়োজিত এক কর্মশালায় মণিপুরী নৃত্যশিল্পী ঝিনুক চক্রবর্তীর ‘নটনিক্কন’ নৃত্য শিক্ষাকেন্দ্রটির যাত্রা শুরু। নিঃশব্দে কাজ করে চলেছেন ঝিনুক। নৃত্যশিক্ষা করেছেন গুরু বিপিন সিং ও কলাবতী দেবীর কাছে। পরে ওড়িশি নৃত্যের শিক্ষা মোনালিসা ঘোষ ও পৌষালী মুখোপাধ্যায়ের কাছে অংশগ্রহণ করেছেন বৃন্দাবন উৎসব, উদয়শঙ্কর উৎসবে। কলকাতা, দিল্লি, পাঞ্জাব, সিমলায় গিয়েছেন নাচের সুবাদেই। এমনকী, দেশের বাইরে জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়াতেও অনুষ্ঠান করেছেন তিনি। মূকাভিনেতা নিরঞ্জন গোস্বামীর সাথে অনুষ্ঠান করেছেন বিহার ও উড়িষ্যার নানা জায়গায়। জলপাইগুড়ির নৃত্যজগতে ঝিনুকের নীরব অবদান, গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি বছর তিনটি করে মণিপুরী ও ভরতনাট্যমের এবং একটি করে সৃজনশীল নৃত্যের কর্মশালার আয়োজন। ইচ্ছে ও প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও এ শহরের সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না,বাইরে গিয়ে নাচের তালিম নেওয়া সেই সব শিল্পীদের ঝিনুক সুযোগ করে দিয়েছেন। ১৯৯৬ থেকে নৃত্যজগতের প্রবাদ প্রতিম শিল্পীরা, তাঁর আহ্বানে এ শহরে বিভিন্ন সময়ে কর্মশালার প্রশিক্ষক হিসাবে এসেছেন। নটনিক্কনে এখন মণিপুরী শিখছে প্রায় ৬০ জন। যার এক তৃতীয়াংশই প্রান্তিক পরিবার থেকে এসেছে। নাচ তাঁকে দিতে পারত খ্যাতি, যশ, প্রতিপত্তি, কিন্তু সে পথে না হেঁটে অবলম্বন করেছেন অনাড়ম্বর জীবন। পেশার চেয়েও অনেক বেশি নাচের প্রতি তাঁর ‘প্যাশন’। এ মাসের কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছে নটনিক্কনের শিশুরা। প্রশিক্ষক সুচরিতা শর্মা নাচের অনুষ্ঠান ও বক্তৃতা দিতে গিয়েছেন। দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় পশুপাখির চলনভঙ্গীতে ভরতনাট্যমের প্রাথমিক অঙ্গ সঞ্চালনের প্রয়োগ করে তা শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা। তাঁর গবেষণার বিষয় ‘চিলড্রেন ড্যান্স ফেস্টিভাল অফ জামাইকা’য় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ বারের কর্মশালায় হংসধ্বনি রাগ, আদিতালে তিলানার একটি ‘মিউজিক পিস’ ব্যবহার করে তিনি ছোটদের শেখান মৌমাছি, প্রজাপতি, পাখি, ময়ূর, হরিণ, হাতি-র চলনভঙ্গী। ছোটরাও ইচ্ছেমতো সে রকম হয়ে যাচ্ছিল।

‘মননে-সৃজনে’ উদ্যোগী উবাচ
‘বাণিজ্য-নগরী’ হিসেবে পরিচিত শিলিগুড়িতে নাচ-গান-নাটককে ভালবেসে তা নিয়েই দিনযাপন করছেন এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। কিন্তু, আবৃত্তি, শ্রুতি নাটকের মতো বিষয়কে পেশা হিসেবে আঁকড়ে রয়েছেন এমন কারও দেখা মেলা কষ্টসাধ্য। অথচ শিলিগুড়ি সহ উত্তরের আবৃত্তি, শ্রুতি নাটকের দুনিয়ায় শিল্পীর সংখ্যা কিন্তু নয়। অন্তত ‘উবাচ’ নামের নবীন সংস্থাটির ‘মননে-সৃজনে’র উপস্থাপনা যেন সেই বার্তা পৌঁছে দিল সংস্কৃতিপ্রেমীদের কাছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর দীনবন্ধু মঞ্চে উবাচের ওই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, চেয়ারম্যান নান্টু পাল, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের জলপাইগুড়ির আধিকারিক জগদীশ রায়, মিত্র সম্মিলনীর সচিব উদয় দুবে, সাহিত্যিক হরেন ঘোষ। উদ্যোক্তা সংস্থার কর্ণধার পারমিতা দাশগুপ্ত বুদ্ধভারতী হাই স্কুলের ১০ জন পড়ুয়াকে পড়াশোনার সামগ্রী দিয়েছেন। তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকটিকে গুরুত্ব দিতেই আর্থিক ভাবে অভাবী পড়ুয়াদের হাতে মধূসুদন সেনের সৌজন্যে ওই ‘সামান্য উপহার’ তুলে দিতে পারছেন বলেও জানিয়ে দেন। বেশ দীর্ঘ অনুষ্ঠান পর্বে ছিল ‘জীবনের জন্য কবিতা’। ৩টি শ্রুতি নাটক পরিবেশিত হয়েছে। মিত্র সম্মিলনীর ‘একটু সুখ’। দ্বিতীয় নাটক পার্থপ্রতিম মিত্রের ‘ভেঙে যায় ক্যালিডোস্কোপ’। তৃতীয় নাটক কথা ও কবিতা সংস্থা পরিবেশন করে ‘ইথিপ ডট কম’। তৃতীয় পর্বে রবীন্দ্র ভাবনায় নৃত্যগীতি আলেখ্য।

‘কোরক’-এ মুক্তধ্বনির অনুষ্ঠান
২২ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়িতে হল ‘মুক্তধ্বনি’ আসর। নিউ আলিপুর প্রাজক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি কলকাতা এবং জলপাইগুড়ি মহিলা কল্যাণ সঙ্ঘের উদ্যোগে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কোচবিহার জেলার একমাত্র সরকারি কিশোর আবাস ‘কোরক’ ওই অনুষ্ঠান হয়। উদ্দেশ্যে ছিল, হোমের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে সমাজের মূলস্রোতের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের একটি বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা। অনুষ্ঠানের অতিথিরা ছিলেন অতিরিক্ত জেলা জজ শ্রী স্বপন কুমার দত্ত, জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি শ্রী বিমল মিত্র, জলপাইগুড়ি শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন শ্রীমতি ছায়া রায়। উপস্থিত ছিলেন হুগলি ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন, জলপাইগুড়ি জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক, প্রাজক-এর স্বেচ্ছাসেবীরা ও জেলা মহিলা কল্যাণ সমিতির কো-অর্ডিনেটর ও শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যা শ্রীমতি দীপশ্রী রায় ও অন্যান্য কর্মীবৃন্দ। এদিন বিশ্বের সব শিশুদের অন্ন, বস্ত্র ও আশ্রয়ের অধিকারের গানমুক্ত ধ্বনিতে মুক্তির গান সমবেত গাইল কোরক ও অনুভব হোমের ছেলেমেয়েরা। ছিল জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন-এর প্রতিবন্ধী শিশুদের মাইম ও নাচের অনুষ্ঠান। অনুভব হোমের নাটক ‘পাচার’। ঊষা মার্টিন স্কুল ও কোরকের শিশুদের মিলিত নিবেদন, ‘আমরা সবাই রাজা’ মূলস্রোতের শিশুদের সঙ্গে মেতে উঠেছিল হোমের শিশুরা। মুক্তধ্বনির মুক্তির আহ্বানে সামিল হয়েছিল শহরের নানা সাংস্কৃতিক সংস্থাও।

সুভাষচন্দ্র সংগ্রহশালা সভাঘরে জলসাঘর
জলপাইগুড়ির শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চাকে সমৃদ্ধ করতে ২০১১ এর ১৪ মে, যাত্রা শুরু করে জলসাঘর। উদ্দেশ্য, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরে তাদের উৎসাহিত করা এবং শহরের প্রবীণ শিল্পীদের সঙ্গীত সাধনাকে সম্মান জ্ঞাপন। সমগ্র উত্তরবঙ্গ ও কলকাতাসহ অন্য সঙ্গীত শহরের বিভিন্ন ঘরানার সাথে এ শহরের চর্চার মেলবন্ধন করা। সহযোগী সংস্থা ইমনের মহড়া কক্ষে জলসাঘরের প্রথম আসর বসে। সেই থেকে প্রতি মাসের দ্বিতীয় রবিবার নিয়মিত ভাবে তা করছে সংস্থাটি। বর্তমানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র সংগ্রহশালার সভাঘরটি ভাড়া নিয়ে আসর বসানো হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.