তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বামপন্থী ভূমিকা’ সিপিএমকে যথেষ্ট বিপাকে ফেলেছে। বিড়ম্বনা কাটাতে দলের নেতা-কর্মীর কাছে সিপিএমকে এখন বলতে হচ্ছে, মমতার ওই অবস্থানও আদতে আমেরিকার শেখানো।
মূলত খুচরো ব্যবসায়ে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বিরোধিতার প্রশ্নে তাঁদের স্লোগান ধার করেই মমতা ‘আরও বেশি বাম’ হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে বৃহস্পতিবার অভিযোগ তুলেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। এ দিন মেয়ো রোডে বাম পরিচালিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের অবস্থানে বিমানবাবু বক্তৃতা করেন। রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমানো, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি এবং এফডিআই প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে কেন্দ্র থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পরে মমতা নিজেকে আরও বেশি ‘বামপন্থী’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। মমতার এই অবস্থান যে সিপিএমকে যথেষ্ট বিপাকে ফেলেছে বিমানবাবুর কথায় তা স্পষ্ট। তৃণমূল কখনও জনগণের স্বার্থে কাজ করতে পারে না এই অভিযোগ তুলে বিমানবাবু বলেন, “বামপন্থীদের স্লোগান চুরি করে নিজেদের বামপন্থী বলে জাহির করা যায়। কিন্তু এদের মনমোহিনী স্লোগানে ভুলবেন না। এরা জনগণের শত্রু।” |
যানজটের কারণে গাড়ি ছেড়ে হেঁটেই সমাবেশের
দিকে যাচ্ছেন বিমান বসু। বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি। |
এফডিআই-সহ বিভিন্ন বিষয়ে মমতা যা বলছেন সিপিএম-ও তাই বলছে। বস্তুত, এ সব যে ‘মানুষের কথা’ বিমানবাবুও তা অস্বীকার করতে পারছেন না। এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকেও সিপিআই-এর মঞ্জুকুমার মজুমদার-সহ শরিক দলের প্রবীণ নেতারা বিমানবাবুর সামনেই মমতার এই অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন। স্বাভাবিক ভাবেই কী ভাবে মমতার এই ‘মনমোহিনী’ ভূমিকার মোকাবিলা করা হবে আলিমুদ্দিনের নেতাদের এখন সেটাই প্রধান চিন্তা। বিমানবাবু বলেন, “তৃণমূল হঠাৎই মানুষের কথা বলছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে। এফডিআই নিয়ে আপত্তি করছে। তৃণমূল বামফ্রন্টের স্লোগান ধার করে আরও বেশি বাম হওয়ার চেষ্টা করছে!”
মমতার এই মার্কিন বিরোধিতার পিছনেও ‘মার্কিন চক্রান্ত’ খুঁজে পেয়েছেন বিমানবাবু। তিনি বলেন, “কমিউনিস্টদের শেষ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন বৈঠক করে ইন্দিরা গাঁধীকে বলেছিলেন, আপনি উগ্র মার্কিন-বিরোধী কথা বলুন। ঠিক সেই রকম হিলারি ক্লিন্টন, ন্যান্সি পাওয়েল মহাকরণে বৈঠক করে তৃণমূল নেত্রীকে বলেছেন, আপনি মার্কিন-বিরোধী কথা বলুন। তবেই বামেরা শেষ হবে। উনি তাই বামপন্থী কথা বলছেন।” বিমানবাবুর অভিযোগ, যে তৃণমূল মানুষকে জমির পাট্টা দেয় না, জোতদারদের বেনামী জমি খুঁজে বার করার চেষ্টা করে না, তারা যতই এফডিআই-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাক, তাদের পক্ষে বামপন্থী হওয়া অসম্ভব।
বামফ্রন্ট পরিচালিত জেলা পরিষদগুলির সভাধিপতি, অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে এ দিন প্রকাশ্যে সভা করে কার্যত পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিল সিপিএম। সরকার পঞ্চায়েত বিলে যে সংশোধনী এনেছে, তা সংবিধান-সম্মত নয় বলে এ দিন বামফ্রন্টের প্রতিনিধিরা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণের কাছে অভিযোগ জানান। তাঁদের আর্জি, বিলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার আগে তিনি যেন আইনজ্ঞ ও কেন্দ্রের পরামর্শ নেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, সরকার নির্বাচিত পঞ্চায়েতগুলিকে কাজ করতে দিচ্ছে না। সিপিএমের ১০ জন জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও বিধায়ক আনিসুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। সরকার যে ভাবে পঞ্চায়েতে মহিলা সংরক্ষণ নীতি নিয়েছে, তাতে তফসিলি, আদিবাসী ও মহিলারা বঞ্চিত হবেন বলে সূর্যবাবুর অভিযোগ। তিনি বলেন, “সরকার পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনার কথা ভাবছে। সে ক্ষেত্রে একই সঙ্গে দু’টি নির্বাচিত পঞ্চায়েত কয়েক মাস ধরে থাকবে। পঞ্চায়েত আইনে তা সম্ভব নয়।” জেলা পরিষদের সভাধিপতিরা তৃণমূলের ১৬ মাস শাসনে তাঁদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, সিপিএমের কৃষক সভার নেতা মদন ঘোষ, নৃপেন চৌধুরী, রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তী প্রমুখ অবস্থানে উপস্থিত ছিলেন। |