আনন্দমঠ হোমের ক্যামেরা যে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে, হোম থেকে দুই কিশোরী আবাসিক নিখোঁজ হওয়ার পরেই তা জানতে পারল জেলা প্রশাসন। আর এ কারণেই দুই আবাসিকার মধ্যে এক জনের ছবি থাকলেও অন্যজনের ছবি তুলে রাখতে পারেনি হোম কর্তৃপক্ষ। ফলে নিখোঁজ দুই কিশোরীর মধ্যে শুধু একজনেরই ছবি তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিদের হোম কর্তৃপক্ষ দিতে পেরেছেন। অন্য দিকে, হোমের সুপার ডালিয়া আচার্যকে ঘটনার জন্য ‘শোকজ’ করা হয়েছে। হোমের দায়িত্বে থাকা পুরো পুলিশ বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারকে চিঠি দিলেন হোমের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) হৃষিকেশ মুদি। ছুটিতে পাঠানো হয় হোমের নিরাপত্তায় থাকা দুই এনভিএফ কর্মীকে।
নিখোঁজ ওই দুই আবাসিকের নাম প্রিয়াঙ্কা রায় ও টুম্পা ঘোষ। প্রিয়াঙ্কা বাঁকুড়া সদর এবং টুম্পা গঙ্গাজলঘাটি থানা এলাকার বাসিন্দা। দু’জনেই চলতি সেপ্টেম্বর মাসে বাঁকুড়া আদালতের নির্দেশে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে শিমুলিয়ার ‘আনন্দমঠ’ হোমে আসে। বুধবার সকালে হোম কর্তৃপক্ষের নজরে আসে, ওই দু’জন উধাও। গত জুন মাসে এই হোমের ‘আবাসিক বিদ্রোহের’ পরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়। তারপরেও ফের হোমের ঘেরাটোপ থেকে দুই কিশোরীর উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ জেলা প্রশাসন। বুধবার হোমে গিয়ে ঘটনার সরেজমিন তদন্ত করেন মহকুমাশাসক (সদর) শঙ্কর নস্কর। এ দিন তিনি হৃষিকেশবাবুর কাছে তদন্ত-রিপোর্ট জমা দেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় নিরাপত্তায় গাফিলতির কথা স্বীকার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) হৃষিকেশ মুদি বলেন, “হোমের নিরাপত্তায় থাকা রক্ষীদের ভূমিকা প্রশ্ন রয়েছে। হোমের সুপার ডালিয়া আচার্যকে ঘটনার জন্য ‘শোকজ’ করা হয়েছে। দুই এনভিএফ কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।” মহকুমাশাসক (সদর) শঙ্কর নস্কর বলেন, “ওই রাতে হোমের নিরাপত্তায় থাকা রক্ষীদের কাছে ঘটনা সর্ম্পকে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা কিছু জানাতে পারেননি।” অতিরিক্ত জেলা শাসকের প্রশ্ন, “রাতের অন্ধকারে হোম থেকে দুই আবাসিকা নিখোঁজ হয়ে গেলেন, অথচ হোমের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রক্ষীরা কিছু জানেন না?” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হোমের নিরাপত্তার দায়িত্বে এক এএসআই , দু’জন কনস্টেবল ও ৫ জন হোমগার্ড রয়েছেন। এ ছাড়া কিছু এনভিএফ কর্মীও রয়েছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “ওই আট জন নিরাপত্তা কর্মীকে সরিয়ে নিতে এ দিন বিকেলে পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছি। সেই সঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে ওদের কারও গাফিলতি প্রমাণ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া এ বার থেকে হোমে সশস্ত্র মহিলা পুলিশ কর্মী মোতায়েন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।” পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “দুই আবাসিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি।”
এ দিকে ঘটনার তদন্তে নেমে কার্যত ‘তাজ্জব’ বনে গিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। বর্তমানে হোম সংস্কারের কাজ চলছে। ফলে বালি, পাথর বা লোহার রড বোঝাই লরি-ট্রাক্টর যখন তখন হোমের ভিতরে ঢুকছে-বের হচ্ছে। শ্রমিকরাও অবাধে হোম চত্বরে অবাধে যাতায়াত করছেন। হোম চত্বর সংরক্ষিত এলাকা হলেও যাঁরা প্রতিদিন কাজের জন্য হোমে যাওয়া-আসা করছেন, তাঁদের কেনও পরিচয় পত্র নেই, এ নিয়ে তদন্তকারী পুলিশ কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তে যাওয়া এক পুলিশ আধিকারিকের প্রশ্ন, “পরিচয় পত্র ছাড়া যাকে তাকে এই হোম চত্বরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে কী করে?” মহকুমাশাসক বলেন, “নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা ঢিলেঢালা ঘটনার পরেই তা বোঝা গিয়েছে।” এ দিকে তদন্তকারীদের হোম কর্তৃপক্ষ একটি কিশোরীর ছবি দিতে পেরেছেন। অন্য কিশোরীর ছবি হাতে না পাওয়ায়, তার সন্ধান কী ভাবে করা যাবে, তা নিয়ে সমস্যায় পুলিশ কর্মীরা। হোমের সুপার বলেন, “আমাদের কাছে একটি মেয়ের ছবি রয়েছে। অন্য জনের ছবি বাঁকুড়া পুলিশের কাছে চাওয়া হয়েছে।” |