লোহার গ্রিল, দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে মা-ছেলেকে মারধর করে লুঠপাঠ চালিয়ে পালিয়ে গেল ডাকাত দল। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানার বড় জিরাফপুরের বিশ্বাস পাড়ায় বুধবার রাতে এই দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যাওয়ার আগে তারা মা ও ছেলের হাত-পা, মুখ বেঁধে রেখে ঘরের বাইরে তালা দিয়ে যায়। ডাকাতেরা তিনটি আলমারি ভেঙে প্রায় ১৫ ভরি সোনার গয়না, হাজার দশেক টাকা, মোবাইল ফোন, জামাকাপণ-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছে বলে পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। খবর পেয়ে বসিরহাট থানার আইসি সুভাশিস বণিকের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব দুষ্কৃতী দলটিকে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করা হবে। লুঠ হওয়া জিনিসপত্রও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’’ |
বসিরহাট রেলস্টেশন থেকে কিছুটা দূরে জিরাফপুরের বিশ্বাস পাড়ায় বড় রাস্তার ধারে দোতলা বাড়ি গৌতম বিশ্বাসের। সন্দেশখালি গ্রামীণ হাসপাতালের কর্মী গৌতমবাবুর মা অপর্ণাদেবী অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে গৌতমবাবুর স্ত্রীর সন্তান হওয়ায় তিনি বাপের বাড়িতে চলে যান। বাড়িতে ছিলেন গৌতমবাবু ও তাঁর মা। বুধবার রাতে দোতলায় ঘরে গৌতমবাবু ও নীচে একতলার ঘরে শুয়েছিলেন অপর্ণাদেবী। রাত তিনটে নাগাদ হটাৎ শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায় গৌতমবাবুর। দেখেন ঘরের মধ্যে চারজন যুবক। তাদের সকলের হাতেই রিভলভার।
গৌতমবাবুর বক্তব্য, “কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা মাথায় রিভলভার ধরে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। দুষ্কৃতীদের তিনজনের মুখ বাঁধা ছিল। একজন তাদের নির্দেশ দিচ্ছিল। আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় ওরা। তারপর আলমারির চাবি চায়। বাধ্য হয়ে ওদের হাতে চাবি তুলে দিই। কিন্তু তাতেই একটু দেরি হওয়ায় ওরা আমাকে লাথি মারে। তার পর আলমারি খুলে সোনাদানা, টাকাপয়সা, জামাকাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়।”
এ দিকে ছেলের ঘরে শব্দের চোটে ঘুম ভেঙে যায় অপর্ণাদেবীর। কী হয়েছে দেখতে দোতলায় ওঠেন তিনি। কিন্তু ছেলের ঘরে ঢুকতেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। তার পর গুলি করার হুমকি দিয়ে মা ও ছেলে, দু’জনেরই হাত-পা, মুখ বেঁধে দেয়। এর পরে তাদের নীচের ঘরে নিয়ে আসে। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট ধরে লুঠপাট চালিয়ে গৌতমবাবু ও অপর্ণাদেবীকে ওই অবস্থায় রেখে বাইরে থেকে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতেরা। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটেছে। কোনওমতে বাঁধন খুলে গৌতমবাবুরা চিৎকার করতে থাকেন। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা আসার সময় দেখেন কয়েকজন রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। সন্দেহ হলেও তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় কেউ বাধা দিতে সাহস পাননি।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় ১০-১২ জন ছিল। চারজন বাড়িতে ঢুকলে বাকিরা বাইরে পাহারায় ছিল। ডাকাতির ধরন দেখে পুলিশের অনুমান তারা আগে থেকে রীতিমতো খোঁজ খবর নিয়েছিল। স্থানীয় কোনও দুষ্কৃতী এতে জড়িত বলে মনে করছে পুলিশ।
এদিন পুলিশের সামনেই গৌতমবাবু বলেন, “টাকাপয়সা, জামাকাপড়-সহ সবই প্রায় নিয়ে গিয়েছে ওরা। এমনই অবস্থা যে, বাজার করার টাকাও ঘরে নেই।” |