মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরে কেটে গিয়েছে প্রায় সাড়ে সাত মাস। কিন্তু সাঁকরাইলে ‘জরি হাব’ তৈরির প্রাথমিক কাজটুকুও শুরু হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে জরি শিল্পীরা, তাঁরাই এখন অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ‘জরি হাব’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচলা বা সাঁকরাইলে ‘জরি হাব’ তৈরির দাবি দীর্ঘ দিনের। জরিশিল্পীদের বক্তব্য, সংগঠিত ভাবে কাজ করতে পারলে তাঁরা লাভের মুখ দেখবেন। ‘জরি হাব’-এ স্টল করে দিলে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ক্রেতারা এসে সরাসরি সেখান থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। কলকাতার বড়বাজারের মহাজনদের কবল থেকে রক্ষা পাবেন শিল্পীরা।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ৬০০ জরিশিল্পী এই ‘হাব’-এ প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়াও, এখানে গড়া হবে একটি রফতানি বাণিজ্যকেন্দ্র। দেশ-বিদেশের ক্রেতারা সরাসরি শিল্পীদের থেকে মাল কিনতে পারবেন। প্রয়োজনে সরকার ‘অনুঘটক’-এর ভূমিকাও পালন করবে। শিল্পীদের কাছ থেকে মাল কিনে নেবে। আবার সরকারি উদ্যোগে আমেরিকা এবং সৌদি আরবে রফতানি করা হবে। |
কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই এগোয়নি।
পাঁচলার বাসিন্দা, তথা ‘সারা ভারত জরিশিল্পী কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক মুজিবর রহমান মল্লিক বলেন, “জরিহাব তৈরির সিদ্ধান্তটি সঠিক। এ জন্য আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। এখানে বিপণন কেন্দ্র তৈরি করে সরাসরি জরিশিল্পীদের কাছ থেকে পণ্য কিনে নিলে তাঁদের উপকারই হবে। কিন্তু হাব এখনও কেন চালু হল না বুঝতে পারছি না।”
কিন্তু সরকারের মুখ চেয়ে না থেকে শিল্পীরা নিজেরা কেন স্টল খুলছেন না? তা হলে তো সরাসরি বাজারে পৌঁছতে পারবে পণ্য। মুজিবর বলেন, “কী পদ্ধতিতে স্টল খোলা যাবে, তা-ও জানায়নি নিগম।”
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্থানীয় জরিশিল্পীদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। আমরা চাই প্রথম পর্যায়ে শিল্পীরা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করুন। দ্বিতীয় পর্যায়ে গড়া হবে রফতানি বাণিজ্যকেন্দ্র। স্থানীয় বিধায়ক শীতল সর্দারকে বলা হয়েছে, শিল্পীদের প্রশিক্ষণের জন্য ডেকে আনতে।” শিল্পমন্ত্রী দাবি করলেও মুজিবর জানান, তাঁদের সঙ্গে এ পর্যন্ত কোনও রকম আলোচনায় বসেনি সরকার বা শিল্পোন্নয়ন নিগম।
যে ভবনটিতে ‘হাব’ হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মমতা, সেটি এক সময়ে ছিল শিল্পোন্নয়ন নিগম পরিচালিত ‘ফুডপার্ক’-এর অন্তর্গত ‘কমন ফেসিলিটি সেন্টার’ (সিএফসি) ভবন। পরিকল্পনা ছিল, ভবনটির একটি অংশে ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হবে। থাকবে কনফারেন্স রুম এবং ল্যাবরেটরি। ‘ফুডপার্ক’-এ যে সব সংস্থা কারখানা তৈরি করেছে, তারা এখান থেকে পরিষেবা পাবে। কিন্তু বছর কয়েক কেটে গেলেও শাখা খুলতে রাজি হয়নি কোনও ব্যাঙ্ক। কনফারেন্স রুম এবং ল্যাবরেটরি ব্যবহার করার জন্য আগ্রহও দেখায়নি সংস্থাগুলি। কার্যত অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল ২৪০০ বর্গফুটের ভবনটি। সেখানেই ‘জরি হাব’ তৈরি করে ভবনটিকে নতুন ভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। |
মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন স্থানীয় কয়েক জন জরিশিল্পী। হাতে-কলমে মুখ্যমন্ত্রীকে কাজ করার প্রক্রিয়া দেখিয়েছিলেন অপর্ণা পাত্র, বন্যা মণ্ডল, দিপালী রায়, কাশ্মীরা মোল্লারা। মঞ্চের সামনে ‘ঢাড্ডা’ (জরির কাজে ব্যবহৃত কাঠের ফ্রেম) পেতে জরির নকশা বুনে দেখিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। ‘মুগ্ধ’ মমতা নিজেই সূচ-সুতো নিয়ে নকশা বুনতে শুরু করেন।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর থেকেই অবশ্য সেই সব জরিশিল্পীদের ‘প্রবেশ নিষেধ’ হয়ে গিয়েছে ওই ভবনে। শিল্পোন্নয়ন নিগমের স্থানীয় আধিকারিকেরা জানালেন, ভবনে ঢুকতে গেলে কলকাতায় তাঁদের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমতি আনতে হবে।
|