প্রাচীন অর্ধনারীশ্বর মূর্তি পেয়ে পুজো শুরু সুখচরে
প্রায় হাজার বছরের পুরনো একটি অর্ধনারীশ্বর মূর্তি খুঁজে পাওয়ার পরে রাতারাতি তার পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। কলকাতার কাছেই উত্তর ২৪ পরগনার সুখচরে ওই মূর্তিটির গায়ে সিঁদুর, আলতা দেওয়া হচ্ছে। মাথায় ঢালা হচ্ছে গঙ্গাজল। পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পাল-সেন যুগের ওই মূর্তি অবিলম্বে সংরক্ষণ করা দরকার। এই ভাবে নিয়মিত পুজো হলে বিগ্রহটি নষ্ট হয়ে যাবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সেনদের সময়ে ভাগীরথীর ধারে সুখচরে অর্ধনারীশ্বরের একটি মন্দির করা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। ধোয়ীর পবনদূতেও এই অর্ধনারীশ্বর মন্দিরটির উল্লেখ রয়েছে।” দ্বাদশ শতকের বাঙালি কবি ধোয়ী কালিদাসের মেঘদূত অনুসরণ করে মন্দাক্রান্তা ছন্দে পবনদূত কাব্য লিখেছিলেন। রূপেন্দ্রকুমারবাবু বলেন, “এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে সেনদের শিলালিপিতেও। এই মূর্তিটি সেই মন্দিরেরই বিগ্রহ বলে মনে করা হচ্ছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপিকা স্বাতী রায়েরও একই মত। তাঁদের বক্তব্য, “এই মূর্তি দ্রুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।”
নিজস্ব চিত্র
গত শুক্রবার সুখচরের পঞ্চাননতলায় একটি বহুতল নির্মাণের জন্য মাটি খুঁড়তে গিয়ে মূর্তিটির অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। যে ঠিকাদার সংস্থা ওই বহুতল নির্মাণ করছে, তাদের কর্মীরাই দড়ি দিয়ে বেঁধে বেশ ভারী ওই মূর্তি তোলার চেষ্টা করে। স্থানীয় একটি ক্লাবের কিছু সদস্যও তখন ওই কর্মীদের সঙ্গে হাত লাগান। শেষ পর্যন্ত ক্রেন এনে মূর্তিটি মাটি থেকে তোলা হয়। ইতিমধ্যে সে খবর ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। স্থানীয় বাসিন্দা মোহন চক্রবর্তী বলেন, “পরম যত্নে সবাই মিলে মূর্তিটি তুলে আনার পরে তার উপরে এক ধরনের অধিকার বোধ এলাকার লোকজনের তৈরি হয়ে গিয়েছিল।” এরপরেই সেই মূর্তি নিয়ে যাওয়া হয় পাশেই একটি মন্দিরে। স্থানীয় বাসিন্দা সুমন ঘোষ বলেন, “ওই মন্দিরটিতে কোনও বিগ্রহ ছিল না। তারই দাওয়ায় এই মূর্তিটি রাখা হয়।” পরদিন সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় লোকজনের ভিড়। পুজো। প্রণামীও পড়তে থাকে। মোহনবাবু বলেন, “ক্লাবের ছেলেরাই মূর্তিটি দেখভাল করছিল। অনেকেই পুজো দিতেও আসছিলেন, মানবিক কারণেই তাঁদের বারণ করা যায়নি। বরং পুজোর ব্যবস্থা করে দিতে হয়েছে।” এখন মন্দির কমিটিও গড়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু ঊর্ধ্বলিঙ্গ এই মূর্তিটি পূর্ব ভারতের অর্ধনারীশ্বর বিগ্রহের একটি চমৎকার নমুনা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষিকা সুদীপা রায় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেবল পূর্ব ভারতেই এবং বিশেষ করে বাংলা ও ওড়িশাতে ঊর্ধ্বলিঙ্গ অর্ধনারীশ্বর মূর্তি পাওয়া যায়। শৈব ও শাক্ত উপাসকদের মধ্যে সমন্বয়ের ভাবনা থেকেই অর্ধনারীশ্বর মূর্তির প্রচলন। সেখানে তন্ত্রের প্রভাবে পূর্ব ভারতে এই বিগ্রহের ঊর্ধ্বলিঙ্গ রূপটি তৈরি হয় বলে অনুমান।” প্রাথমিক সমীক্ষার পরে পুরাতত্ত্ব দফতরের অনুমান, খুবই ভারী এই মূর্তিটি প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা। সুদীপাদেবী বলেন, “এই বৃহদাকার অর্ধনারীশ্বর মূর্তিটি কোনও মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত ছিল বলে মনে করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বঙ্গদেশে অর্ধনারীশ্বর উপাসকেরাও ছিলেন, এমন অনুমানও করা যায়।”
কিন্তু এই মূর্তিটি কেন পুরাতত্ত্ব দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না? ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “শুক্রবারই পুরাতত্ত্ব বিভাগকে আমরা খবর পাঠিয়েছি।” পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “আমাদের দফতরে কোনও চিঠি বা খবর আসেনি। সংবাদ মাধ্যম থেকে জেনে আমরা নিজেরাই জেলাশাসকের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। আমরা গিয়ে মূর্তিটি দেখেও এসেছি।” তিনি বলেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আমরা গিয়ে ওই মূর্তিটি সংগ্রহ করব। তবে তাতে প্রশাসনকে সাহায্য করতে হবে।” পূর্ণেন্দুবাবুর বক্তব্য, “আমরা সব রকম সাহায্য করতে তৈরি। আমরা ইতিমধ্যে মূর্তিটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।” মোহনবাবুও বলেন, “আমরাও চাই মূর্তিটি ঠিক ভাবে সংরক্ষণ হোক।” অমলবাবু বলেন, “মূর্তিটি রাজ্য সংগ্রহশালায় রাখা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.