নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলা |
বিজন, অশোক ধরা দিলেন আদালতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া ও তমলুক |
আত্মসমর্পণ করলেন নন্দীগ্রাম ‘নিখোঁজ কাণ্ডে’ অভিযুক্ত পূর্ব খেজুরি ও নন্দীগ্রামের দুই দাপুটে সিপিএম নেতা বিজন রায় ও অশোক বেরা। দীর্ঘদিন ‘ফেরার’ থাকার পরে বুধবার সকালে হলদিয়া এসিজেএম আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করেন দু’জন। এই মামলায় কোনও অভিযুক্তের আত্মসমর্পণ এই প্রথম।
এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিজনবাবু ও অশোকবাবু হলদিয়া এসিজেএম আদালতে হাজির হন। আত্মসমর্পণের পরে জামিনের আবেদন করেন দু’জনের আইনজীবীরা। তবে এসিজেম দেবকুমার সুকুল আবেদন নাকচ করে দু’জনকেই ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হাজতের নির্দেশ দেন। বেরনোর সময় সাংবাদিকেরা জিজ্ঞাসা করেন, দলীয় নির্দেশেই কি আত্মসমর্পণ? বিজনবাবু নিরুত্তর থাকলেও অশোকবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “পার্টি করি বলে কি পার্টির নির্দেশেই আত্মসমর্পণ করতে হবে?” আত্মসর্পণের বিষয়টি জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক কানু সাহু। |
|
হলদিয়া আদালতে অশোক বেরা ও বিজন রায়। ছবি: আরিফ ইকবাল খান। |
নন্দীগ্রাম পর্বে সিপিএমের খেজুরি জোনাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন বিজন রায়। আর অশোক বেরা ছিলেন নন্দীগ্রাম জোনাল সম্পাদক। অশোকবাবু ২০০৮ সাল পর্যন্ত নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও ছিলেন। ২০০৯ সালে দু’জনেই জোনাল সম্পাদকের পদ থেকে অপসারিত হন। ছিলেন জেলা কমিটির সদস্য। ২০০৯ সালেই খেজুরি ছেড়ে হলদিয়ায় থাকতে শুরু করেন বিজনবাবু। খেজুরির প্রাথমিক স্কুল থেকে হলদিয়ার ব্রজনাথচক প্রাথমিক স্কুলে বদলিও হয়ে যান এই শিক্ষক। স্থানীয় গদাইবলবার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক অশোক বেরা অবশ্য গত বছর বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত নন্দীগ্রামেই ছিলেন। ২০১১ সালের নভেম্বরে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় নাম জড়ানোর পরে গা ঢাকা দেন তিনি।
২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর ভূমি উচ্ছেদ কমিটির একটি মিছিল নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া থেকে মহেশপুর যাওয়ার পথে গোকুলনগরের করপল্লির কাছে সংঘর্ষ বাধে। কয়েক জন জখম হন। নিখোঁজ হয়ে যান ৯ জন তৃণমূল সমর্থক। পরে দু’জনের দেহ পাওয়া গেলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৭ জন। রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১১ সালের অগস্টে নিখোঁজ ৬ জনের পরিজনেরা হাইকোর্টে ‘হেভিয়াস কপার্স’ মামলা করেন। ওই বছরই সেপ্টেম্বরে মামলায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তদন্তে নেমে সিআইডি কয়েক জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি হলদিয়া আদালতে ৮৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। সেই চার্জশিটে নাম ছিল বিজনবাবু ও অশোকবাবুর। চার্জশিটে নাম থাকা প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ, প্রাক্তন বিধায়ক অমিয় সাহু, জেলা কৃষকসভার নেতা অশোক গুড়িয়াকে গত ১৭ মার্চ মহারাষ্ট্র থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। ১২২ দিন জেলবন্দি থাকার পর গত ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন পায় লক্ষ্মণ শেঠ। এই মুহূর্তে এই মামলার ৮ অভিযুক্ত জেলবন্দি রয়েছেন। আগেই জামিন পেয়েছে ১১ জন। ‘পলাতক’ ৬৫ জনের বিরুদ্ধে ৮ অগস্ট সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের জন্য হুলিয়া জারি হলদিয়া আদালত। পলাতকদের বাড়িতে সিআইডি সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নোটিসও সাঁটিয়েছে। তালিকায় ছিলেন বিজনবাবু ও অশোকবাবু। গত ৩ সেপ্টেম্বর পলাতক ৪ জন সিপিএম নেতা হাইকোর্টের নির্দেশে হলদিয়া আদালত থেকে আগাম জামিন পান। তার পর এ দিন দুই নেতা আত্মসমর্পণ করলেন। ফলে, ৫৯ জনের বিরুদ্ধে ওই হুলিয়া জারি থাকল। হুলিয়ার মেয়াদ শেষ হবে ২৪ সেপ্টেম্বর। |
|