বাসভাড়া না বাড়লে যে বাসযাত্রীদের সুবিধা হয়, এটা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হওয়ার দরকার হয় না। টাকা গুনে গুনে খরচ করে যাদের সংসার চালাতে হয়, তারা সবাই জানে। বাজার দরের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে, যেখানে যেটুকু কম হয়, সেটুকুই মধ্যবিত্তের লাভ। কাজেই সরকার যখন সহমর্মিতার কথা বলে নাভিশ্বাস ওঠা মধ্যবিত্তের পাশে দাঁড়ায়, বাসভাড়া না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আশা জাগে, বেঁচে থাকা হয়তো একটু সহনীয় হবে। কিন্তু ভাড়া না বাড়িয়েও যদি বাসযাত্রীদের খরচ বাড়িয়ে দেওয়া হয়?
নানা কাজে আমাকে কলকাতা শহরের নানা জায়গায় যেতে হয়। তার মধ্যে সপ্তাহে বেশ কয়েক দিন নিয়মিত একটি রুটে চলাফেরা করতে হয়। আমার বাড়ির কাছ থেকে সেই রুটে একটি সরকারি বাস ছিল। খাতায়-কলমে এখনও আছে। সেই বাসে গন্তব্যে পৌঁছতে আমার এক পিঠের ভাড়া ছিল সাড়ে সাত টাকা। নতুন সরকার আসার আগে পর্যন্ত আমি সাড়ে সাত টাকাতেই যেতাম। তার পর যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে যত সরকারের দৃষ্টি পড়তে লাগল, আমাদের রুটের বাসও কমতে লাগল। এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে দিনে তিনটি বাস চলে কিনা সন্দেহ! আগের মতো সেই এক বাসে যাওয়াটা এখন স্বপ্নাতীত। গোটা রুটটি যদি ভেঙে ভেঙে যাই, তা হলে এগারো থেকে পনেরো টাকা মোটামুটি এক পিঠের ভাড়া পড়ে। এবং তার সঙ্গে বেশ খানিকটা হাঁটা। |
এবং সেই ভেঙে ভেঙে যাওয়াটাও আর সম্ভব হচ্ছে না বেশির ভাগ দিন। কারণ, আমি যে রুটটির কথা বলছি, কেবল সেটিই তো নয়, সব রুটের বাসই মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে। কেবল বেয়াদপ বেসরকারি বাস নয়, সুভদ্র সরকারি বাসও। সত্যি কথা বলতে কি, বেসরকারি বাসের আগে সরকারি বাস রাজপথ থেকে উধাও হয়েছে, ফলে বাসস্টপের ভিড় আর কমে না। অনেক অপেক্ষার পর যদি বা একটা এল, ওঠে কার সাধ্য! বাধ্য হয়েই প্রায় প্রতি দিনই ট্যাক্সি নিতে হয়। তার নেট ফল সাড়ে সাত টাকার রাস্তা পার হতে আমার এখন একশো টাকা লাগছে।
বাসভাড়া বাড়েনি, খুব ভাল কথা। কিন্তু আমার যাতায়াতের বাজেট যে এক লাফে তেরো-চোদ্দো গুণ বেড়ে গেল, তার দায় কে নেবে? |