সংস্কৃতি যেখানে যেমন... |
|
নতুন সংখ্যা |
|
‘তরতাজা গাছ কেমন ঝিমিয়ে পড়ে। সেই গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে রয়েছে একজন কাঠুরে। পাশে রয়েছে তাঁর কুঠার। সেটি ধারালো। দেখলেই বোঝা যায়, সেটি চূড়ান্ত গাছ-লোলুপ। গাছ তখন তাঁর পাতাদের আরও ঘন হতে বলে। যে পাতাগুলি ঝরে যাবার জন্য তৈরি, তাদের থামায়। কাতর কণ্ঠে পাতাদের জানায় আরও ছায়া দাও। লোকটা ঘুমাক। যেন আর কখনও জেগে না ওঠে।’ ‘গাছ ও একজন কাঠুরে’র গল্প। একটি নির্মল, মেদহীন গভীর গল্প। লিখেছেন করুণাপ্রসাদ দত্ত। এমনই আশ্চর্য সব গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ নিয়ে সিউড়ি থেকে প্রকাশিত হল ‘ভূমিজ’ লিটল ম্যাগাজিনের তৃতীয় বর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যা। সম্পাদক পার্থসারথি ঘোষ। এ বারের সংখ্যার থিম রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দ হলেও অন্যান্য লেখাও তাতে জায়গা পেয়েছে। নিবেদিতা লাহিড়ীর ‘রবি গানে সাঁওতালি টান’ এবং পতিতপাবন বৈরাগ্যের ‘স্বামী বিবেকানন্দ ও স্বদেশ চেতনা’ আলাদা করে নজর টানে। পাঠকের ভাল লাগবে এই পত্রিকার কবিতা পর্বটিও। রয়েছে সদ্য প্রয়াত কবি কবিরুল ইসলামের কবিতা ‘শেষ বিবৃতি’। ‘এ যুগ কালিদাসের নয়, আমার, হ্যাঁ, আমারই’ এমন দৃপ্ত ঘোষণা আর ক’জনই বা করতে পারেন! এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য নিভা দে-র কবিতা ‘গদ্য-পদ্য সমীপেষু’। অন্য দিকে, আজকের দিনের এক অন্য রকম ভণ্ডামির তীব্র সমালোচনা ধরা পড়েছে তপন গোস্বামীর কবিতায় ‘মেঘ ডাকলে তোমার ভয় করে
হরিবোল শব্দেও তোমার ভয়
বেপাড়ার বেড়াল রাস্তায় আঁচড়ে দিয়ে গেলে
তুমি রাস্তায় মুখ দেখো না সাতদিন।...’
|
ভাদু উৎসব |
|
আমোদপুর ও বোলপুরে ভাদু গানের প্রতিযোগিতা। |
গরিব মানুষকে নানা ভাবে সাহায্য করত মেয়েটা। এমনিতে রাজকন্যা হলেও রাজবাড়ির থেকেও তার মন পড়ে থাকত ওই সব মানুষের দুঃখকষ্টে। পুরলিয়ার কাশীপুর রাজবাড়ির সেই কন্যা ভদ্রেশ্বরী বা ভাদুই ক্রমে লোকায়ত দেবী হিসাবে রূপান্তরিত হয়েছে। ওই কিংবদন্তি অনুসারে সেই ভাদুদেবীকে ঘিরেই ভাদু উৎসব। ওই উৎসবে ভাদ্র মাস পড়লেই মাটির তৈরি ভাদু পুতুল নিয়ে মাতামাতি হয় সর্বত্র। ভাদু উৎসবের গান লেখেন, সুর দেন স্থানীয় ভাদুশিল্পীরাই। গানগুলিতে উঠে আসে সমকালীন নানা আর্থ-সামাজিক সমস্যার কথা।
গত ৯ সেপ্টেম্বর এলাকার ১৫টি ভাদু গানের দলকে নিয়ে বোলপুর টাউন গ্রন্থাগারে হয়ে গেল কর্মশালা ও ভাদুগানের প্রতিযোগিতা। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন পশ্চিমবঙ্গ লালন আকাদেমির পক্ষে শুভেন্দু মাইতি। অন্য দিকে, গত ১০ সেপ্টেম্বর আমোদপুর জয় দুর্গা ক্লাবেও এলাকার ১৩টি ভাদু গানের দল নিয়ে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রতিযোগিতায় বোলপুর লাগোয়া পারুলডাঙ্গা গ্রামের এক মহিলা দলও যোগ দিয়েছিল।
|
লোক-উৎসব |
|
গত সাত বছর ধরে লাভপুরে লোকসংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করে আসছে বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী। এ বছর ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হল। বীরভূম ছাড়াও নদিয়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদের শিল্পীরা বিভিন্ন ধারার অনুষ্ঠান সেখানে পরিবেশন করেন। প্রথমদিন জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সহযোগিতায় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নানান প্রতিযোগিতামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
|
নির্মল শিবদত্ত |
‘কোথায় লুকোবো মুখ
চারিদিকে নির্লজ্জ দর্পণ
সামনে পিছনে পাশে
আততায়ীর নিষ্ঠুর কৌতুক’
-না। আজ থেকে বহু বছর আগে এটি লিখেছেন আমোদপুরের বাসিন্দা নির্মলশিব দত্ত। সাহিত্য-পাগল এই মানুষটির কথা আজকের প্রজন্ম হয়তো জানে না। ১৯৫৯ সালে সাঁইথিয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা করার সময় তিনি তৈরি করেছিলেন দ্বিমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘রাঙামাটির দেশে’। এই পত্রিকার প্রতি মুগ্ধতার কথা চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন তারাশঙ্কর বন্ধ্যোপাধ্যায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, শিবরাম চক্রবর্তী, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, সৈয়দ মুজতবা আলি, সুনীতি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘মানচিত্র’। এই অজানা নক্ষত্র বর্তমানে বার্ধক্যজনিত কারণে প্রায় গৃহবন্দি।
|
‘অগ্রদানী’ |
|
অগ্রদানী নাটকের একটি দৃশ্য। আমোদপুর ও বোলপুরে |
সিউড়ির ‘শ্রীরঙ্গম নাট্য সংস্থা’র নতুন প্রযোজনা ‘অগ্রদানী’। সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী গল্প ‘অগ্রদানী’ অবলম্বনে নাটকটি লিখেছেন দলেরই সদস্য হেমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় রবীন্দ্রসদনে নতুন নাটকটির মঞ্চায়ন উপভোগ করলেন দর্শক। হেমন্তবাবু এই নাটকের সঙ্গীতও দিয়েছেন। আলোয় রয়েছেন বিশ্বনাথ বিশ্বাস। এ ছাড়া কুশীলবদের প্রাণবন্ত অভিনয়ও নাটকটিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। |
তথ্য: অরুণ মুখোপাধ্যায়।
ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, অনির্বাণ সেন, নিজস্ব চিত্র। |
|
• স্বামী বিবেকানন্দের চিকাগো বক্তৃতার ১২০তম বর্ষ উপলক্ষে কাশীপুর পঞ্চকোটরাজ ভগিনী নিবেদিতা বিদ্যাপীঠে গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হল নানা অনুষ্ঠান। বিদ্যাপীঠের পড়ুয়াদের বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরি হয়। স্বামী বিবেকানন্দের বলা গল্প, রবীন্দ্র নৃত্য, আবৃত্তি প্রভৃতি হয়। আজকের সমাজ জীবনে বিবেকানন্দের ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের শিক্ষক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাপীঠের সভাপতি স্বামী ভাস্করানন্দ।
• নবাগত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নবীনবরণ অনুষ্ঠান হল ঝালদা অচ্ছ্রুরাম স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে। বৃহস্পতিবার মহাবিদ্যালয়ের হলে এই অনুষ্ঠানে পড়ুয়ারা ঝুমুর, নাচ, আবৃত্তি পরিবেশন করেন। নবাগতদের পাশে প্রাক্তনরাও ছিলেন।
|
|
ছবি: সুজিত মাহাতো। |
• স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের উদ্যোগে ১০ সেপ্টেম্বর একটি আলোচনাসভা হয়ে গেল। জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার সফল প্রতিযোগীদের পুরস্কৃত করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ আত্মপ্রভানন্দ-সহ বিশিষ্টজন। তিনি স্বামী বিবেকানন্দের জীবন নিয়ে বক্তব্য রাখেন। |
|