কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় (কেএমএ) ১৫ বছর বা তার বেশি পুরনো বাসের সংখ্যা ৪০০৩। এই ধরনের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি ও বাসের অধিকাংশই চলছে ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া। ওই সব গাড়ি রাজ্য সরকারের প্রাপ্য করও দেয় না। রাজ্যের পরিবহণসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছেন, ওই গাড়িগুলি বাতিল করার প্রক্রিয়া রাজ্য সরকার শুরু করছে।
হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ১৫ বছরের পুরনো বাস, লরি, ট্যাক্সি বাতিলের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত এ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত এবং অসীমকুমার মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ পরিবেশসচিবের কাছে জানতে চায়, পুরনো গাড়ি বাতিল নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ রাজ্য সরকার কার্যকর করছে কি না। গত সপ্তাহে আদালতে ‘দায় এড়ানো’ রিপোর্ট জমা দেওয়ায় পরিবহণসচিবকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতিরা। |
সম্প্রতি পরিবহণ সচিবের পক্ষ থেকে আদালতে আরও একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৯৭ সালের ৩১ অগস্ট পর্যন্ত কলকাতায় ৮৫৮টি বাস নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪৬টি বাস ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়েছে এবং কর জমা দিয়েছে। হিসেবটা মিনিবাস, ট্যাক্সি এবং লরির ক্ষেত্রে কমবেশি একই রকম। ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যে সব গাড়ির বয়স ১৫ বছর হয়েছিল, সেগুলি বাতিল করেছিল বাম সরকার। তার পর থেকে কোনও পুরনো গাড়ি বাতিল হয়নি।
অথচ, রিপোর্টের এক জায়গায় গোপালিকা জানাচ্ছেন, ‘১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৯৭ সালের ৩১ অগস্ট পর্যন্ত ১৫ বছরের পুরনো বেশির ভাগ গাড়িই বাতিল করা হয়েছে এবং সেগুলি আর কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় চলছে না।’ ওই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, ‘যে সব বাণিজ্যিক গাড়ি নথিভুক্তির পরে ১৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে, তাদের আর ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না।’ সুভাষবাবু মনে করেন, এই রিপোর্টেও অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। আগামী শুনানির দিন ডিভিশন বেঞ্চ পরিবহণসচিবের এই রিপোর্ট দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবে।
রাজ্যের পরিবহণ দফতর মেনে নিয়েছে, আদালতের নির্দেশ মেনে কেএমএ এলাকা থেকে চার হাজারেরও বেশি বাস বাতিল করতেই হবে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া কী ভাবে রাজ্য সরকার শুরু করবে, তা আদালতকে জানায়নি তারা।
সুভাষবাবুর বক্তব্য, “ওই বিপুল সংখ্যক বাস একবারে বাতিল করে দিলে চূড়ান্ত হয়রানি হবে সাধারণ নাগরিকদের। ভাড়া না বাড়ানোয় এমনিতেই বাসের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। সেই কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। এ বার আরও চার হাজার বাস বাতিল হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে। অথচ এই নিয়ে রাজ্য সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই।” সুভাষবাবু কথায়, “আদালত পরিবহণ দফতরের কাছে ওই পরিকল্পনার ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা এখনও কিছু জানায়নি।” |