‘বিজেপি-সঙ্গে’র খোঁচা তৃণমূলের
ক্ষতি অর্থনীতিরই, ২০শে সেই ধর্মঘটের ডাক
শেষ পর্যন্ত সেই চেনা পথেই! সংস্কার-বিরোধিতায় আরও একটি ধর্মঘট দেখতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ। অর্থাৎ আম জনতার দোহাই দিয়ে এমন এক কর্মসূচি, যাতে দেশের অর্থনীতিতে আরও ধাক্কা লাগবে!
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি হ্রাস এবং খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) দ্বার খুলে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে রাজ্যে ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘট ডাকল বিরোধী বামফ্রন্ট। ওই একই দিনে গোটা দেশে বন্ধের ডাক দিয়ে রেখেছে এনডিএ। আবার এসইউসি-ও তাদের ভারত বন্ধ পালনে একই তারিখ বেছে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বা যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলছেন, দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে কেন্দ্রীয় সরকারকে পরপর কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বাম-সহ প্রতিবাদকারীদের পাল্টা বক্তব্য, আম জনতার জীবন এর ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
রবিবার আলিমুদ্দিনে প্রকাশ কারাট। ছবি: রাজীব বসু
কিন্তু প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসাবে যে ধর্মঘটের রাস্তা এই দলগুলি বেছে নিল, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আম জনতাই! সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট অবশ্য রবিবারও দাবি করেছেন, তেলের উপরে আদায়-হওয়া করের কাঠামো পুনর্বিন্যাস করে জনতাকে কিছুটা রেহাই দেওয়ার ‘বিকল্প’ কেন্দ্রের সামনে ছিল।
ধর্মঘটের জেরে যে আর্থিক ক্ষতি, তা খেসারত তো দিতে হবে সাধারণ মানুষকেই! সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের দাবি, “ধর্মঘট কেউ স্বেছায় করে না, বাধ্য হয়! তা ছাড়া, সাধারণ মানুষের উপরে যে বোঝা চাপানো হয়েছে, তার তুলনায় ধর্মঘটের ক্ষতি সামান্যই। যে সরকারের কাছে মানুষের স্বার্থ গৌণ, তাদের জন্য এই প্রতিবাদের পথেই যেতে হচ্ছে।” কিন্তু ধর্মঘটের পরেও মনমোহন পিছিয়ে আসবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই ধর্মঘট করে সত্যিই ‘কাজ’ হবে কি না, তার ব্যাখ্যাও প্রতিবাদীদের কাছে নেই।
শরিকদের সঙ্গে আলোচনা সেরে নিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে ধর্মঘটের কথা ঘোষণা করেছেন। আলিমুদ্দিনে বিমানবাবু বলেছেন, “যে ভাবে খুচরো বাজার খুলে দিয়ে লুঠ করতে দিচ্ছে সরকার, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ হচ্ছে, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমছে তাতে মনে হচ্ছে, ইউপিএ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে! এই যখন অবস্থা, তখন আর বসে থাকা যায় না! বামফ্রন্ট ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করবে।” রেল-সহ শিল্প, বাণিজ্য, অফিস-কাছারি সবই ধর্মঘটের আওতায় পড়বে বলে বিমানবাবু জানিয়েছেন। আলিমুদ্দিনেই কারাট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “২০ তারিখ সারা দেশ স্তব্ধ হয়ে যাবে! কারণ, প্রায় সব দলই ইউপিএ-র সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। তবে এফডিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ২০ তারিখেই শেষ হয়ে যাবে না। কোনও রাজ্যেই ওয়ালমার্ট, টেসকো বা ক্যারেফোর-এর মতো সংস্থাকে আমরা বিপণি খুলতে দেব না!” প্রসঙ্গত, একই দিনে ত্রিপুরাতেও ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে বামেরা।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইউপিএ-র সাম্প্রতিক একগুচ্ছ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। কিন্তু তিনি ধর্মঘটের পথে যাওয়ার বিরোধী। আবার যে প্রশ্নে ধর্মঘট হচ্ছে, সেগুলি নিয়ে একই ভাবে সরব তৃণমূল! এই পরিস্থিতিতে বামেদের বিজেপি-সঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজনৈতিক মোকাবিলায় নেমেছে তৃণমূল। রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আডবাণী (লালকৃষ্ণ)-বিমান, সব এক হয়ে গিয়েছে। বিজেপি-র সঙ্গে গোপন আঁতাঁত করেছেন কারাট। বিজেপি-কে মদত দিতেই এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।” তবে ধর্মঘটের রাজনীতিকে রাজ্য সরকার বরদাস্ত করবে না, এই হুঁশিয়ারি দিয়ে সুব্রতবাবু বলেন, “মানুষকে বিব্রত করার জন্য এই বন্ধ ব্যর্থ হোক, কামনা করি! বন্ধ না-করে আমরা যে ভাবে সংগঠিত প্রতিবাদ করছি, তা করা উচিত। বন্ধ মোকাবিলায় সরকার কী পদক্ষেপ করবে, তা জানিয়ে দেওয়া হবে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ঘোষিত ধর্মঘট-বিরোধী অবস্থান মাথায় রেখে তাঁরা কী করবেন? বিমানবাবু এ দিন বলেছেন, “আমরা জানি না, সরকার কী করবে। তবে সব অংশের মানুষের কাছে আবেদন করছি, এটা তাঁদের বাঁচা-মরার বিষয়। সবাই মিলে অংশগ্রহণ করে ধর্মঘটকে সফল করতে হবে।” পাশাপাশি, এফডিআই-বিরোধিতায় তাদের এবং মমতার আন্দোলন যে এক নয়, তা-ও বোঝানোর চেষ্টা করেছে সিপিএম। কারাটের কথায়, “আমরা যখন ইউপিএ-র সমর্থক ছিলাম, চার বছর এই সিদ্ধান্ত ঠেকিয়ে রেখেছিলাম। পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছিল, খুচরোয় এফডিআই চলবে না। এখন তৃণমূল ইউপিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও আছে। বাইরে থেকে সমর্থন করে যা আমরা আটকাতে পেরেছিলাম, সরকারের শরিক হয়ে তৃণমূল তা পারল না কেন?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.