পিতৃপক্ষে গয়ায় আসুন, ‘সরকারি অভিভাবকত্বে’ পিতৃপুরুষের উদ্দেশে পিণ্ড দান করুন, আশপাশের এলাকা ঘুরে বেড়িয়ে ‘কলা বেচাটাও’ সেরে নিন। পূণ্য লোভাতুর আর ভ্রমণপিপাসু ভারতবাসীকে এক ছাতার তলায় আনতে এ বার বিহার সরকারের উপহার এই ‘পিতৃপক্ষের প্যাকেজ’। তাতে থাকছে ‘বন্ধুভাবাপন্ন’ সরকারি পাণ্ডার আশ্বাসও। বিহার পর্যটনের কর্তাদের আশা, সে পাণ্ডাকে আপনিও ‘লাইক’ করবেন।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর, মহালয়ার দিন পর্যন্ত চলবে পিতৃপক্ষ। আর গয়ায় শুরু হবে পিতৃপক্ষ মেলা। গত কয়েক বছর ধরেই মেলার আয়োজন করছে বিহার পর্যটন দফতর। ঘোষিত লক্ষ্য ‘ভারতবাসী’ হলেও, আসল লক্ষ্য অবশ্য ভ্রমণপিপাসু মধ্যবিত্ত বাঙালিকে পিতৃপক্ষে গয়ায় টেনে আনা। আর মূল লক্ষ্য অবশ্যই পিতৃপক্ষ মেলাকে সামনে রেখে পর্যটন ব্যবসায় লাভের গুড় ঘরে তোলা।
দেবীপক্ষ সূচনার আগে, পিতৃপক্ষে লক্ষ লক্ষ পর্যটক গয়ায় আসেন পিতৃপুরুষের উদ্দেশে পিণ্ডদান করতে। তার মধ্যে একটা বড় অংশ বাঙালি। বাকি রাজ্যের পর্যটকদের অধিকাংশই পিণ্ডদান করে ফিরে গেলেও বিহার সরকারের সমীক্ষা, বাঙালিরা এর পরে গয়া এবং তার আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখেন। বিহার পর্যটন নিগমের কর্তা নবীন কুমারের কথায়, “বাঙালি সব সময়েই ভ্রমণপিপাসু। পিতৃপক্ষের সময়ে তাঁরা আসেনও প্রচুর। তাই পর্যটনের আয় বাড়াতে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটকদের মূলত বেছে নিয়েছি। এ ছাড়া মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তামিলনাড়ু-সহ আরও কয়েকটি রাজ্যেও প্রচার করা হচ্ছে।” |
বিহার পর্যটন উন্নয়ন নিগম সূত্রের খবর, গয়া থেকে এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত পিতৃপক্ষের বিশেষ প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক দিকে পিণ্ডদান, অন্য দিকে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখার সুযোগ। গয়ায় পিণ্ডদান করতে এমনিতেই যেতে হবে ফল্গু নদী থেকে শুরু করে অক্ষয়বট এবং বিষ্ণুপদ মন্দিরে। গয়ার পাণ্ডারা এমনিতেই ‘বিখ্যাত’। তাদের নিয়ে চালু আছে নানান ভয়াবহ কাহিনীও। এরই মধ্যে বাঙালির একমাত্র ভরসা ছিল ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। কিন্তু সেখানেও ছিল সমস্যা। ‘ভারত সেবাশ্রম’-এর নকল ছেয়ে ফেলেছিল গয়া। সব মিলিয়ে গয়া নামেই ক্রমশ বাঙালির মনে এক ধরণের অনীহা, আতঙ্ক তৈরি হচ্ছিল। ‘হোম ওয়ার্ক’ করেই নেমেছে বিহার পর্যটন দফতর। গয়ার পাণ্ডাকুল সম্পর্কে পর্যটকদের ভীতির ব্যাপারেও তারা সচেতন। সেই কারণেই তাঁরা ‘সরকারি পাণ্ডা’-র ব্যবস্থা রাখছেন। প্রচারেও থাকছে তার বিশেষ উল্লেখ।
এক এবং দু’দিনের প্যাকেজে পিণ্ডদানের সঙ্গেই থাকছে বুদ্ধগয়ার ৮০ ফুটের বুদ্ধ মন্দির, মহাবোধি মন্দির-সহ বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ মন্দির দর্শনের সুযোগ। তিন দিনের প্যাকেজে গয়া, বুদ্ধগয়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজগীর-নালন্দাও। নালন্দার প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজগীরে রোপওয়ে ও বিশ্বশান্তি স্তূপ ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া হবে নেপুরার গ্রামীণ পর্যটনেও। দেখানো হবে মহাবীরের জন্মস্থান এবং নির্বিকল্প সমাধিস্থল, কুন্ডলপুর ও পাওয়াপুরিও। দেখানো হবে রাজগীরের বিখ্যাত শিলাও-খাজা তৈরির প্রক্রিয়াও। পাঁচ দিনের প্যাকেজে যাত্রা শুরু হচ্ছে গয়ার বদলে পটনা থেকে। প্যাকেজে ঘুরিয়ে দেখানো হবে পটনাও।
পর্যটন নিগম সূত্রে জানানো হচ্ছে, এই সমস্ত ভ্রমণের খরচ শুরু হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা থেকে। সাধারণ মানের হোটেল ছাড়াও থাকছে তিন ও পাঁচতারা মানের সুযোগ সুবিধেও। তবে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের কর্তা রবি প্রকাশ বলেন, “আমরা কোনও ক্ষেত্রেই খরচ খুব বেশি ধরছি না। ভাল মানের হোটেল, এসি গাড়ি এবং ভাল খাওয়ার ব্যবস্থা রাখছি।” নবীন কুমার বলেন, “ভিন্ রাজ্যের পর্যটকদের সুবিধের জন্য অন-লাইন বুকিংয়ের সুযোগও রেখেছি।” অর্থাৎ নেটে বুকিং করে সটান কলকাতা থেকে ট্রেনে চেপে গয়া। তার পর বিহার পর্যটনের ‘অতিথি’। প্রতিশ্রুতি, ‘দেব’ ভাবেই হবে অতিথি আপ্যায়ণ। |