দুর্নীতির অভিযোগ তুলে খাদ্য সরবরাহ দফতরের পাঁচ কর্মীকে তালা বন্ধ করে প্রায় পাঁচ ঘন্টা আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল। মঙ্গলবার নাকাশিপাড়া ব্লক অফিসের ভেতরে খাদ্য সরবরাহ দফতরের এক পরিদর্শক, তিন সহকারী পরিদর্শক এবং এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে তালা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখায় নাকাশিপাড়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অশোক দত্তের নেতৃত্বে স্থানীয় বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মী। সেই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রধানও।
সরকারি কর্মীদের আটক করে রাখার খবর পেয়ে বিডিও এবং নাকাশিপাড়া থানার ওসি ঘটনাস্থলে আসেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে অবশে তাঁদের ছাড়া হয়। অশোকবাবু বলেন, “খাদ্য সরবরাহ দফতরের কর্মীরা দিনের পর দিন দুর্নীতি করছেন। টাকার বিনিময়ে রেশন কার্ড দিচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের টাকা দিয়ে ভূয়ো সার্টিফিকেটও দিচ্ছেন। প্রতি মাসে ৭-৮ লরি রেশনের চাল পাচার করে দিচ্ছে।” এ ব্যাপারে একাধিকবার ‘সতর্ক’ করা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি বলেন, “বাধ্য হয়ে এ দিন আমরা ওই সরকারি কর্মীদের তালা বন্ধ করে রেখেছি।” কিন্তু সরকারি কর্মীদের ‘কাজে বাধা’ দেওয়ার অধিকার কি তাঁদের আছে? তার কোনও স্পষ্ট উত্তর অবশ্য মেলেনি। তৃণমূল সভাপতির দাবি, “এ দিন সকালে এক জন ইন্সপেক্টর বেথুয়াডহরি চৌরাস্তার কাছে এক ডিলারের হাতে ৮০টি রেশন কার্ড তুলে দিচ্ছিল। আমরা সেটা হাতেনাতে ধরে ফেলি। তার পরে আমাদের কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।” খাদ্য সরবরাহ দফতরের জেলা নিয়ামক অমিয়প্রসাদ রায় বলেন, “নাকাশিপাড়ায় এক দল লোক আমাদের কর্মীদের দীর্ঘক্ষণ তালা বন্ধ করে আটকে রাখে। আমরা তাঁদের বারবার অনুরোধ করি তালা খুলে দেওয়ার জন্য। আমাদের কর্মীরা যদি সত্যিই কোনও অপরাধ করে থাকেন, তাহলে আমরা বিভাগীয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এ ভাবে সরকারি কর্মীদের তালা বন্ধ করে রাখা যায় না।” তিনি জানান, বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে সরজমিনে তদন্ত করা হবে। প্রয়োজনে যারা কর্মীদের আটক করে রেখেছিল, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হবে। ‘অভিযুক্ত’ ওই পরিদর্শক অবশ্য বলেন, “পুরো বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। যা ব্যবস্থা নেওয়ার তাঁরাই নেবেন।” জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “ওই ঘটনায় থানায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” নদিয়ার জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা বলেন, “গোটা বিষয়টি তদন্ত করে মহকুমাশাসককে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি। রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।” |