বহরমপুরের ‘কাদাই হোমে’র কোনও অস্তিত্বই নেই। কিন্তু রয়ে গিয়েছে হোমের ১১ জন কর্মী। তাঁদের জন্য প্রতি মাসে সরকারি খরচ ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৯৯৭ টাকা। গত নয় বছর ধরে কর্মীদের নিয়মিত বেতন দিতে সরকারের কোষাগার থেকে ওই অর্থ খরচ হচ্ছে। এ দিকে নতুন করে হোম চালুর ব্যাপারে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের তরফে এখন পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ।
অনূর্ধ্ব ১২ বছর বয়সী দুঃস্থ আবাসিকদের ‘হোম ফর ডেস্টিটিউট চিলড্রেন, কাদাই’-এ রাখা হত। তাদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত হোমে রাখার নিয়ম ছিল। কিন্তু ১৮ বছরের পরেও অনেকে হোমে থাকত এবং তা নিয়ে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওই হোমটি গত ২০০৩ সাল থেকে সমাজ কল্যাণ দফতর বন্ধ করে দেয়। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের হোম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ঠিকানা হয় অন্য একটি সরকারি হোম ‘আনন্দ আশ্রম’। আগে অবশ্য ওই হোমটি শুধুই অবজারভেশন হোম বা বিচারাধীন শিশুদের রাখা হত। |
কাদাইয়ের ওই হোমটি বন্ধ করে দেওয়া হলেও রয়ে গিয়েছেন ১১ জন কর্মী। অন্য দিকে, নতুন করে ওই হোম চালু করার জন্য চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন সিরাজুল ইসলাম গত ২৯ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি দিয়েছেন। এর আগেও হোম চালুর ব্যাপারে সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রকেও চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু তাঁদের আর্জির কোনও উত্তর আসেনি এখন। ফলে হোম চালুর বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সিরাজুল বলেন, “ওই হোমে ১০০ জন আবাসিক থাকত। কিন্তু ২০০৩ সালে ওই হোম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১১ জন কর্মীর এখন কোনও কাজ নেই। প্রতি মাসে প্রায় ২ লক্ষ টাকা তাদের বেতন গুনতে হচ্ছে সরকারকে।” তাঁর অভিযোগ, সরকার পরিবর্তন হলেও এক শ্রেণির সরকারি কর্মীদের মানসিকতার কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফলে জেলাপ্রশাসন থেকে সমাজকল্যাণ দফতরে বার বার চিঠি লিখেও কোনও ফল হয়নি। এ জন্য অর্থ বরাদ্দ করে নতুন করে ওই হোম চালুর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখা হয়েছে। কিন্তু তারও কোনও উত্তর মেলেনি।”
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অনিন্দ্যনারায়ণ চৌধুরীর জবাব, “ওই হোমের ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।” মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজীব কুমার অবশ্য বলেন, “নতুন করে ওই হোম চালুর জন্য চার-পাঁচ মাস আগে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সুস্থ হয়ে যাওয়া আবাসিকদের ওই হোমে পুনর্বাসন দেওয়া যেতে পারে বা দুঃস্থ আবাসিকদের রাখা যেতে পারে বলে সরকারকে জানানো হয়েছে। গোটা বিষয়টি সমাজকল্যাণ দফতর ও স্বাস্থ্য দফতর যৌথ ভাবে দেখভাল করবে বলেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমাজ কল্যাণ দফতরের তরফে চিঠি দিয়ে এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনকে কোনও কিছু জানানোও হয়নি।” |